ব্যক্তিগত জীবন থেকে ইন্ডাস্ট্রি সব নিয়ে খোলাখুলি বললেন রাজন্যা মিত্র !
“থিয়েটারে অনেকে অনেক রকম কথা বলে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে। আমার মনে হয় কিছুটা ঘটে, আবার কিছুটা ঘটানো ও হয়।” এক সাক্ষাৎকারে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের বিষয় থেকে শুরু করে নিজের অভিনয় জীবনের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে খোলাখুলি আলোচনা করলেন অভিনেত্রী রাজন্যা মিত্র। বড়পর্দাতেও তিনি অভিনয় করেছেন। তবে সেখানে তাঁকে সেভাবে দেখা না গেলেও ছোটপর্দাতে কিন্তু তাঁর অবাধ বিচরণ।
বিভিন্ন সিরিয়ালে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে প্রচুর ভালোবাসা কুড়িয়েছেন দর্শকের। এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, অভিনয়ের অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের নানা জানা অজানা তথ্য তুলে ধরেছিলেন। অভিনেত্রী যে এতগুলো ধারাবাহিকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন এর ফলে দর্শকদের কাছ থেকে কি ফিডব্যাক পান তিনি ?
এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করাতেই রাজন্যা মিত্র বলে ওঠেন, “ভালো ফিডব্যাকই পাই অবশ্যই। তবে আমার নেগেটিভ চরিত্র করতে ভীষণই ভালো লাগে। ইদানিংকালে না হলেও দু-তিন বছর আগে নেগেটিভ চরিত্র করেছি। সেখানেও আমি মানুষের কাছ থেকে প্রশংসাই পেয়েছি। যখন তারা ছুটে মারতে আসে বা ওইরকম কোন পসিশনে আর্টিস্টরা পড়েন তখন মনে হয় যে আমার চরিত্রটা সফল হয়েছে। ঠিকঠাক হয়তো সেটা আমি তুলে ধরতে পেরেছি।
সুতরাং নেগেটিভ বা পজিটিভ সে যেকোন চরিত্রই হোক না কেন আমার ভালো লাগে। আর ভালো অভিনয় যদি করতে পারি তখন দর্শকরাও তাদের মত করে ফিডব্যাক দেন যেটা আমার কাছে ভীষণভাবেই গ্রহণযোগ্য।” অভিনয় জীবনের এই জার্নিটা কেমন কাটছে রাজন্যার ? অভিনেত্রীর কথায়, যেহেতু অভিনয়টাকেই তিনি তাঁর জীবনে বেছে নিয়েছেন তাই এই মুহূর্তে অন্য কোন কিছু তিনি ভাবতে পারেন না। তাই এটাই এখন অভিনেত্রীর ধ্যান জ্ঞান।
আর অভিনয়টা এনজয় করছেন বলেই এখনও অভিনয়ের মধ্যে তিনি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তাহলে কি আর বাকি অভিনেত্রীদের মতো তাঁকে ও কোন স্ট্রাগেলিং পিরিয়েডের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। হ্যাঁ। তাঁকে ও শুরুতে স্ট্রাগেলিং পিরিয়েডের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। এই যে এখন মেকআপ রুমে এসিতে বসে থাকতে পারেন এর আগে মেকআপ রুমে এইসব এসির ব্যবস্থা থাকত না এবং তখন অনেক বাধ্যবাধকতাও ছিল।
আর তখন ডিসিপ্লিনগুলো ছিল বলেই হয়তো আজও তিনি সেই ডিসিপ্লিনগুলোকে মেনটেন করে চলতে পারেন বলে মত অভিনেত্রীর। সেই সঙ্গে অভিনেত্রী বলেছেন, এখনও তাঁর মতো অনেকেই আছেন যারা চেষ্টা করেন সেই ডিসিপ্লিনগুলোকে ধরে রাখার। তবে আগেও ভালো কাজ হয়েছে এখনো ভালো কাজ হচ্ছে। আর আগামী দিনেও অভিনেত্রীর ভালো কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে।
তাঁর এও মনে হয়, নতুন যারা ইন্ডাস্ট্রিতে আসছেন তাঁদের সাথে মানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি শেখার কিছু আদান-প্রদান হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। তাহলে স্ট্রাগল পিরিয়ডের সময় কতগুলো বাঁধা অতিক্রম করতে হয়েছিল রাজন্যাকে ? অভিনেত্রী বলেন, “আমি ছোট থেকেই থিয়েটার করেছি। থিয়েটার দেখে বড় হয়েছি এবং একটা সময় থিয়েটারের সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা হয় না।
তবে থিয়েটারে অনেকে অনেক রকম কথা বলে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে। আমার কাছে মনে হয় কিছুটা ঘটে, আবার কিছুটা ঘটানো ও হয়। আমাকে হয়তো সে রকম কোনো ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। আর যদিও কখনো ছুটকোছাটকা কোন জায়গা থেকে আমার মনে হয়েছে যে সেখান থেকে কোনো ভালো এপ্রোচ আমার জন্য আসবে না আমার বাড়ির তরফ থেকে সেই শিক্ষা ছিল তাই আমি সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি।
আরও পড়ুন : চল্লিশের দোরগোড়ায় পৌঁছেও কিভাবে নিজের গ্ল্যামার ধরে রেখেছেন মনামী ?
আমার কাছে কোন মেজর জিনিস সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ভগবানের এবং আপনাদের আশীর্বাদে অল্প অল্প করে একটু একটু করে কমবেশি অনেক কাজই পেয়েছি।” তবে সমস্যার সন্মুখীন হতে না হলে ও চরিত্র থেকে বাদ পড়তে হয়েছে তাঁকে। এই বিষয়ে রাজন্যা বলেন, “এটা আমি শুরুর দিকে কথা বলছি ইদানিং কালের কথা বলছি না। আমার জীবনে শুরু থেকে এমনও হয়েছে যে চরিত্র পেয়ে গেছি, ফাইনাল হয়ে গেছে তারপরে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিংবা শেষ মুহূর্তে জানানো হয়েছে। এরকম কিছু ঘটনা ঘটেছে। তো এগুলো তো থাকবেই, না হলে আমি শিখব কি করে ? আমার এক্সপেরিয়েন্সটা গ্যাদার করবো কি করে ? ওগুলো হয়েছে বলেই আজকে আমি আছি এখনও অবধি। তবে সেটা নিজেকে বোঝাই হয়তো আমি সেই চরিত্রটার জন্য যোগ্য ছিলাম না। হয়তো আমার মধ্যে কোথাও অভাব ছিল। হয়তো আমি এই চরিত্রটাকে প্লে করতে পারতাম না। তাই যারা সিনিয়র ছিলেন বা যাদের মনে হয়েছে তাঁদের হয়তো ঠিকই মনে হয়েছে।”
তবে অভিনেত্রীর কাছে নেগেটিভ ও পজেটিভ সমস্ত চরিত্রই তাঁর বেশ পছন্দের। তিনি মনে করেন যে চরিত্রে তিনি কিছু দিতে পারবেন। তাঁর নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী তিনি যদি সেই চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে পারেন তাহলে সেখানেই তাঁর সার্থকতা। তাই তাঁর যে কোন রকম চরিত্রেই অভিনয় করতে ভালো লাগে। সেই সঙ্গে এই ইন্ডাস্ট্রিতেও প্রচুর মেমোরি রয়েছে অভিনেত্রীর। অনেক ভালো ভালো মানুষকে যেমন পেয়েছেন তেমনই অনেক ভালো মানুষের সান্নিধ্য ও পেয়েছেন।
রাস্তায় দেখলে লোক যে তাঁকে চিনতে পারেন। তাঁর কাছে এসে যে কথা বলেন, ছবি তোলেন এই ভালোবাসাটাই তাঁর কাছে অনেক। সবশেষে নিজের ব্যক্তিগত জীবন প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, আমি খুব সীমিত মানুষের সঙ্গে বা আমার কমফোর্টজোনের মধ্যেই থাকতে ভালবাসি। আমি একা মানুষ। আমার মেয়ে, মা ও বাবাকে নিয়ে আমি ভালো থাকি। আমার পরিবারের সাপোর্ট রয়েছে। তাছাড়া আমার কিছু ভালো বন্ধু রয়েছে তাদের সাপোর্ট রয়েছে।
সেই হিসেবে আমি ভালোই আছি। আমার মত করে আমার জগতটাকে তৈরি করে নিয়েছি। আর জীবনে কোন সমস্যায় পড়লে আমি আশপাশের মানুষদের সাহায্যে সেটা হ্যান্ডেল করি। আবার কখনো নিজের বুদ্ধিতেও করি। কিন্তু আমার যারা বন্ধু-বান্ধব সবাই রয়েছে তারা জানে যে আমি এরকমই হাসি খুশি। সবার সাথে মিলেমিশে, হাসিখুশি ভাবে থাকতে ভালোবাসি। একটা জায়গায় কাজের মধ্যে রয়েছি, সেখানে পরিবার তৈরি করতে আমার কোন দ্বিধাবোধ হয় না বরং ভালো লাগে।