রবীন্দ্র কবিতার পর এবার নজরুলগীতিতে স্বরচিত সুর প্রয়োগ করে কাঠগড়ায় এ.আর.রহমান
এই গান শুনলে রক্ত যেখানে গরম হয়ে যায়, সেখানে এটা শুনে রক্ত শূন্য হয়ে যাবে…”! দেশাত্মবোধক গানের বিকৃত প্রয়োগে ক্ষুব্ধ নেট দুনিয়া! নজরুল গীতি নিয়ে কেন এমন “এক্সপেরিমেন্ট” করলেন এ.আর.রহমান? কোন গানের প্রতি এমন “অবিচার” অস্কার জয়ী সঙ্গীত পরিচালকের?
সাল তখন ১৯২১। ইংরেজ শাসনে ত্রস্ত সমগ্র ভারত। হাজার হাজার বীর শহীদের রক্তক্ষয়েও দমাতে পারছে না ইংরেজের দামাল রক্তকে। ভারতীয় কবি সাহিত্যিকরা অস্ত্র করে তুলছেন তাঁদের কলম। বাদ যাননি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাঁর লেখনী হয়ে ওঠে তাঁর প্রতিবাদী গর্জনের স্বরূপ।
বিভিন্ন গান এবং কবিতার মাধ্যমে শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে থাকেন বিদ্রোহী কবি। বন্দী মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্ত করার দাবিতে নজরুল কলম ধরেন। লেখেন ‘কারার ঐ লৌহ কপাট..’। আলোড়ন সৃষ্টি হয় সারা ভারতবর্ষে। স্বাধীনতার লড়াইয়ে আরও প্রবল ভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠেন হাজার হাজার ভারত মাতার বীর সন্তান।
সাল ২০২৩। গানটি রচনার পর কেটে গেছে প্রায় একশো বছরেরও বেশি। আরও একবার এই গানকে ঘিরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে দেশ জুড়ে। যে গান হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতার মূল মন্ত্র, সেই গান ঘিরেই এখন উঠল বয়কটের ডাক! আর এই ঘটনাটিতে ইন্ধন যোগালেন অস্কার বিজয়ী সঙ্গীত পরিচালক এ.আর.রহমান।
ভারতীয় সঙ্গীত সাম্রাজ্যের অন্যতম রাজ সিংহাসন দখল করে আছেন এ.আর.রহমান। গ্র্যামি, অস্কার সহ বিভিন্ন পুরস্কার ভরাট করেছে তাঁর সাফল্যের ঝুলি। নব্বই এর দশকের প্রতি তরুণ তরুণীর মনকে সুরের বাঁধনে বেঁধেছিলেন এই কিংবদন্তি সুরকার। কিন্তু আজ তাঁর হাত ধরেই ঘটল এক “অঘটন”।
রাজা কৃষ্ণ মেনন পরিচালিত ‘পিপা’ ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে আছেন এ.আর.রহমান। অভিনেতা ঈশান খট্টর এবং ম্রুনাল ঠাকুর অভিনীত এই ছবিটি গড়ে উঠেছে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পটভূমিতে। তাই ছবির বিষয়বস্তুকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে স্বয়ং সঙ্গীত পরিচালক ব্যবহার করেছেন এই দেশাত্মবোধক নজরুলগীতিটি। কিন্তু গানটি নির্বাচন করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, বরং করেছেন এক দুসহসিক ‘এক্সপেরিমেন্ট’।
‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটিকে সম্পূর্ন স্বরচিত সুরে প্রয়োগ করেছেন এ.আর.রহমান। আর সেখানেই ঘটেছে গানের বিকৃতি। গানটির আসল সুর হয়েছে ক্ষুন্ন। সম্পূর্ন নতুন সুরে গানটি শ্রোতাদের কাছে হয়ে উঠেছে রীতিমত পীড়াদায়ক।
প্রসঙ্গত, এই গানের মাধ্যমে বলিউডে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে অভিষেক হয়েছে সারেগামাপা খ্যাত গায়ক রাহুল দত্তের। নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন তিনিও। তাঁরই এক অনুগামী জানিয়েছেন, এ আর রহমানের সুরে গান গাইলেও, গানটি একেবারেই শ্রুতিমধুর হয়নি। বাঙালি হয়ে, এমন এক দেশাত্মবোধক গানের কীভাবে বিকৃতি ঘটালেন তিনি!
যদিও এর আগেও এ.আর.রহমান ঘটিয়েছেন এমন দুর্ঘটনা। স্বয়ং কবিগুরুর কবিতাতে স্বরচিত সুর আরোপ করে দাঁড়িয়েছিলেন কাঠগড়ায়। এবারেও একই ভুল করলেন তিনি। গানটি মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর দিকে ধেয়ে এল কটাক্ষের তীর। ক্ষুব্ধ নেটিজেনরা তাঁর এই প্রয়াসকে ‘ছ্যাবলামি’ র আখ্যা দিলেন।
জনৈক নেটিজেন কমেন্ট করে জানিয়েছেন, “কাজী নজরুল ইসলামের এমন একটি গানের আত্মাকে নষ্ট করা হয়েছে।” কেউ বা বলেছেন, “উনি বিখ্যাত সুরকার বলেই যা খুশি তাই করতে পারেন না।”
সরব হয়েছেন বাঙালি শিল্পীরাও। সঙ্গীত শিল্পী রাঘব চট্টোপাধ্যায় থেকে শিলাজিৎ, প্রমুখের মুখে শোনা গেছে প্রতিবাদী সুর।
যদিও এত নেতিবাচক মন্তব্যের মধ্যেও কিছু শ্রোতা পাশেও দাঁড়িয়েছেন সঙ্গীত পরিচালকের। তাঁদের বক্তব্য, মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। এ আর রহমানও এমন একটি ভুল করে ফেলেছেন। তা বলে তাঁর পূর্বের কাজের মাহাত্ম্য কখনই লাঘব হয় না।