পর্দার বাচস্পতির মতোই ‘ঢেপসি বউ’ মন্তব্য শুনতে হয়েছে আবিরকে! কিন্তু সৌন্দর্য হিসেবে মনকেই গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন অভিনেতা, ফাটাফাটি মুক্তির পর খোলামেলা আড্ডায় আবির
ফাটাফাটি(Fatafati) ছবি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই তার প্রশংসায় ভাসছেন আবির(Abir Chatterjee)। বিশেষ করে ছবিতে তার যে চরিত্র দেখেছেন দর্শক তারপর আর প্রশংসা না করে উপায় নেই। এই সমাজে বাচস্পতির মত মানুষ যে ভীষণ দরকার তা যেন অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দিয়েছেন অভিনেতা। মনোজদের অদ্ভুত বাড়িতে অতিথি শিল্পী হিসেবে এলেও এবার উইন্ডোজের হাত ধরে পূর্ণদৈর্ঘ্যের চরিত্রে কাজ করলেন আবীর।
ছবির বিষয়বস্তু বডি সেমিং। যার শিকার এই সমাজের প্রতি নিয়ত প্রতি সেকেন্ডে বহু মানুষ হচ্ছেন। কেউ রোগা বলে ,কেউ মোটা বলে, কেউ বেঁটে কেউ আবার অতিরিক্ত লম্বা। সবকিছু নিয়েই চুল ছাড়া বিশ্লেষণে বসে থাকে সমাজের দল ঠিকাদার। তাদেরকেই যোগ্য জবাব দিয়েছে আবির ঋতাভরির এই ছবি। ছবির বিষয়টা খুবই গুরুগম্ভীর কিন্তু সেটা কি হালকা ভাবে তুলে ধরেছেন শিবপ্রসাদ এবং নন্দিতার প্রোডাকশন।
অভিনেতার কথা অনুযায়ী যখন তিনি স্ক্রিপ্ট শোনেন তখন গল্পটার সঙ্গে ভীষণভাবে মিল পেয়েছিলেন তিনি। নিজের জীবনের তো বটেই এছাড়া আশেপাশে বহু মানুষের গল্প এটি। তাই বললেন ,’ফাটাফাটি ছবিটা আমি ছাড়া কে করবে’? ব্যক্তিগত জীবনে বাচস্পতির সঙ্গে কতটা মিল রয়েছে আবিরের? অভিনেতা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, বাচস্পতির মতন তিনি হতে পারবেন না। কিন্তু বাচস্পতি স্বামীদের মানটা উঁচুতে নিয়ে গেছে। সৌন্দর্যের প্যারামিটার নিয়ে কোন রকম ভাবতে নারাজ বাচস্পতি, বাস্তবে আবিরও অনেকটা সেই রকম।
ব্যক্তিগত জীবনে আবির এমন বহু কথা কিসের শিকার হয়েছেন। কারণ তার স্ত্রী তার তুলনায় অপেক্ষাকৃত স্থূল। তাই ট্রেলার এবং স্ক্রিপ সবটাই পড়েছেন নন্দিনী। কিন্তু বডি সেমিংয়ের ব্যাপারটা এত কাছ থেকে দেখেছেন অভিনেতা? প্রশ্ন আসতেই উত্তর,’এটা বলতে আমার কোনও লজ্জা নেই। যাঁরা অকথা-কুকথা বলছেন, লজ্জা তাঁদের পাওয়ার কথা। যাঁরা ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের চেনেন না, বা যাঁরা চেনেন, একটু দূরের আত্মীয়কেও কুকথায় অংশ নিতে দেখেছি।
একটা সময় আমরা আন্ডার কনফিডেন্ট ছিলাম, কিন্তু সময় এবং অভিজ্ঞতার সঙ্গে আমরা এটা পেরিয়ে যেতে শিখেছি। সবার পক্ষে সম্ভব নয়, আমরা জানি। অপমানের স্তর পেরিয়ে যেতে হয়, যা সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। আমাকে ডিরেক্টলি কেউ বলেননি, কিন্তু কানাঘুষোয় তো শুনেছি। নন্দিনীকে একুট বেশি শুনতে হয়েছে। যে এমন ছিপছিপে ছেলে এমন মোটা বিয়ে করল! সোশ্যাল মিডিয়া খুললে এখনও কমেন্টে দেখতে পাবেন, এইট্টি পার্সেন্ট এই ধরনের কমেন্ট।
অনেকে জিজ্ঞেস করেন, কীভাবে রিঅ্যাক্ট করো এই ধরনের কমেন্টে? একটা বয়স অবধি রিঅ্যাক্ট করতাম। পরে দেখলাম, এগুলো প্রতিক্রিয়া পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না। আমি তাঁদের সুস্থতা কামনা করি। বাচস্পতির কথায় ফিরি, আমার স্ক্রিপ্টটা পড়ে ভাল লেগেছিল এই কারণেই, বাচস্পতির কখনও মনে হয়নি, সে ফেভার করছে। সে মন থেকে বউ ফুল্লরাকে (ঋতাভরী) ভালবাসে। স্ত্রী যেমন, তেমন ভাবেই ভালবাসে। বাচস্পতি মনে করে না সে মহামানব।
এই জন্যই আমার ছবিটা করতে সবচেয়ে ভাল লেগেছে। বউয়ের পাশে দাঁড়ানোকে কর্তব্য মনে করে না, স্বাভাবিক বিষয় মনে করে’। একই রকম ভাবে শারীরিক অসুস্থতা কাটিয়ে ঋতাভরি যখন সেটে এসেছিলেন তখন তার চেহারাও প্লাস হয়ে গিয়েছিল। সকলে চমকে গিয়েছিলেন অভিনেত্রীকে দেখে। যদিও সেটা একটা বিজ্ঞাপনের সুট ছিল। তাই এই লড়াইটা কিছুটা হলে ঋতাভরি(Ritabhari Chakraborty)র নিজেরও, জানালেন আবির।
পনেরো বছরের দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে কোন রকম গসিপ ঢুকতে পারেনি তাদের জীবনে। এর কারণ হিসেবে নিজেদের শক্ত মজবুত বন্ধুত্বকে এগিয়ে রেখেছে আবির। তবে আবিরকে সাধারণত গোয়েন্দা মূলক ছবিতেই বেশি দেখা যায়। চেনা ছকের বাইরে বেরিয়ে একটু অন্য ধারার ছবিতে এই প্রথম দেখা গেল তাকে। একইসঙ্গে অপেক্ষা করে রয়েছেন আগামী দিনের বক্স অফিসের দিকে। নতুন বছরে সেই ভাবে কোন ছবি তাক লাগাতে পারেনি বক্স অফিসে। তাই আপাতত সেদিকেই লক্ষ্য আবিরসহ গোটা টলিউডের।