ন বছরের প্রেমকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন অঙ্কিতা, ৫-৬বার নিজেকে শেষ করে দিতেও চেয়েছিলেন! হঠাৎ করে জীবনে আসে খোলা হাওয়া, ব্যক্তি জীবন থেকে সিনে দুনিয়া সবকিছু নিয়ে অকপটে অঙ্কিতা
ইষ্টিকুটুম ধারাবাহিকে ‘কমলিকা’ চরিত্র তাকে এনে দিয়েছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়তা। পাশাপাশি অন্যান্য ধারাবাহিক ওয়েব সিরিজে এখন কাজ করে চলেছেন তিনি চুটিয়ে। অঙ্কিতা চক্রবর্তী(Ankita Chakraborty) দেখতে দেখতে ১৭ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন এই বিনোদন জগতে। বর্তমানে তার পরিচয় ইন্দ্রানী হিসেবে। সেখানেই নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। অন্যদিকে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার নতুন ওয়েব সিরিজ ৭। আরো একবার কাজ করলেন নিজের পছন্দের পরিচালক অঞ্জন দত্তের সঙ্গে।
এই সিরিজে আবার এক মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন অঙ্কিতা। তাই মুক্তির আগেই নিজের চরিত্র নিয়ে নানারকম কথা বললেন আনন্দবাজারকে। এর আগেও অঞ্জন দত্তের সঙ্গে একাধিকবার কাজ করতে দেখা গিয়েছে অঙ্কিতাকে। এখনো পর্যন্ত পাঁচখানা কাজ করে ফেলেছেন এটি ছ নম্বর।
অভিনেত্রী নিজেই জানিয়েছেন,’ অঞ্জনদার সঙ্গে এটা আমার ষষ্ঠ কাজ। আমি এর আগে ওর সঙ্গে ব্যোমকেশে কাজ করেছি। এবার সেভেন করলাম। ফলো করতেই পারছেন তার সঙ্গে কাজ করে অভিজ্ঞতা বেশ ভালো। খুব সহজ ছিল’। ধারাবাহিক এবং ওয়েব সিরিজ দুটোতেই সমানতালে কাজ করে চলেছেন তিনি। কেমন কাটছে তার জীবন এখন? একটুও সময় না নিয়ে জানিয়েছেন আপাতত ভীষণ খুশি তিনি কাজ না থাকলেও খুশি। কারণ কাজ ছাড়া কিছু করার নেই জীবনে।
কিন্তু বিনোদন জীবনে হঠাৎ করে কিভাবে আশা তার? গডফাদারের খোঁজ তো তেমন পাওয়া যায় না। এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী জানিয়েছেন,’ক্লাস টুয়েলভে পড়াকালীন থিয়েটার করা শুরু করি। অগুনের বর্ণমালা বলে একটা শো করতাম। ওটা দারুণ জনপ্রিয় হয়। এরপরই অফার আসতে শুরু করে। তবে মা সেই সময় অনুমতি দেয়নি কাজ করার। এরপর ক্লাস টুয়েলভ পাশ করার পর আমি অনেক ঝগড়া করে কাজ শুরু করি। কিন্তু প্রথম ১০ বছর আমি আমার কেরিয়ারকে কোনও গুরুত্ব দিইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে ইষ্টি কুটুমের পর আমার চরিত্র বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। সেই প্রথম নিজের কেরিয়ার, নিজেকে নিয়ে ভাবা শুরু করি। কিন্তু একি সঙ্গে বুঝলাম আমার আরও প্রশিক্ষণ দরকার। তখন বেণীদির (দামিনী বেণী বসু) কাছে অভিনয় শিখতে শুরু করি। আমার এই সফরটা তোলপাড় করা ছিল’।
কিন্তু তোলপাড় করা মানেটা কেমন,’তখন আমার জীবনে একটা একটা করে সব ভেঙে যায়। আমি ভেবেছিলাম মুম্বই কলকাতা দুই শহরে কাজ করব। এই করতে গিয়ে আমার ৯ বছরের সম্পর্ক ভেঙে যায়। ডিপ্রেশনে চলে যাই। ৫-৬ বার নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টাও করি। তখন আমার ওজন কমে ৪২ কেজি হয়ে গিয়েছিল। থেরাপি নিতে হতো। আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না তখন। এর মধ্যে আবার লকডাউন হয়ে যায়’।
নিশ্চয়ই লকডাউন বিষয়টা খুব খারাপ করে তুলেছিল জীবন। কিন্তু অভিনেত্রী এ বিষয়ে একেবারেই উল্টো কথা বলেন। জানান এই লকডাউন ব্যাপারটাই তার শাপে বর হয়েছিল। একদিকে যেমন যুদ্ধ চলছিল বাড়ি এবং পেশার সঙ্গে। ঠিক তেমনি এই লকডাউন তার জীবনটাকে ঘুরিয়ে দেয়। বর্তমানে প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুখী দাম্পত্য জীবন তার। নতুন প্রেম আশায় জীবন কতটা বদলেছে? আত্মবিশ্বাসের সুরে অভিনেত্রী বলেন,’ প্রান্তিক আমার জীবনের একটা বিশ্বাস। আমার সঙ্গে ও গোটা সময়টা ছিল। আমি ওকে এতদিন যেভাবে পেয়েছি সেভাবেই পেতে চাই। স্বামী তকমা দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখতে চাই না’।
তবে এবার নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ ভাবছেন তিনি। জানিয়েছেন দীর্ঘ দশ বছর নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ততটা গুরুত্ব দেননি। তাহলে হয়তো আজকের ছবিটা কিছুটা অন্যরকম হতো। আজ করেনি কোনরকম বড় ব্যানারের সঙ্গেও। অভিনেত্রী নিজেই বললেন,’এই ১৭ বছরে আমি কোনও বড় ব্যানারে ছবি করিনি। আমি আসলে নিজের শর্তে কাজ করি। আমার নাম কেউ যখন নেয় সেটা সম্মানের সঙ্গে নেয়। আমি এটাই চেয়েছিলাম। ভুয়ো জীবনযাপন দেখানোর ইচ্ছে নেই কাউকে। অন্যের থেকে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, গাড়ি পাওয়ার থেকে সিরিয়াল করা, টাকা জমিয়ে ভালো কাজ করা অনেক ভালো। আমি এখনও ভাড়া বাড়িতে থাকি। প্রতিটা জিনিস নিজের টাকায় কেনা। আমি আমার জীবন, কেরিয়ার নিয়ে গর্বিত’।