একসময় তিনি পর্দায় উপস্থিত হলেন কেঁপে উঠতেন প্রত্যেকে। এমন দুর্ধর্ষ ভিলেন বাংলা সিনেমা আর দ্বিতীয় পেয়েছেন কিনা সন্দেহ। তিনি বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়(Biplab Chatterjee)। যিনি রাস্তায় বেরোলে অভিভাবকেরা ছোট বাচ্চাদের দেখিয়ে বলতেন, ‘ওই দেখো দুষ্টু লোক আসছে’। তবে পর্দায় যতটাই ধূসর বাস্তবে ততটাই মাটির মানুষ বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। স্ট্যাম্পমারা খলনায়ক বলা হত তাকে। দর্শকেরা কি মারাত্মক ঘৃণা করতেন তাকে সেটাই সম্প্রতি উগ্রে দিয়েছেন টিভি নাইনের পর্দায়। বাংলার নয়া সিরিজ ‘নায়ক নেহি খলনায়ক হু মে’ শুরু হলো তাকে দিয়ে।
প্রথমেই তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয় রাস্তায় বেরোলে কি ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। এ ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেকটা বড়। কেউ রাস্তায় দেখে তেড়ে এসেছেন। তাতে অবশ্য বেশ কষ্ট পেয়েছেন অভিনেতা।
কিন্তু কেন কষ্ট হতো? তিনি জানিয়েছেন যখন দেখতেন বাচ্চারা তাকে দেখে ভয় পাচ্ছেন তাদের বাবা মায়েরা বলতো,’ ওই যে দুষ্টু লোক যাচ্ছে’। অথবা বলত ,’ ওই দেখ ওই যে দুষ্টু লোক। তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে’। স্বাভাবিকভাবে এগুলো দেখে কষ্ট হতো তাই কখনো কখনো নিজেই এগিয়ে গিয়েছেন অভিভাবকদের কাছে তাদের বুঝিয়ে বলেছেন বাচ্চাদের এমন না বোঝাতে। কারণ তিনি নিজে বাচ্চা ভীষণ ভালবাসেন। তাই তাদের কাছে তিনি ভিলেন এটা যেন প্রতিপন্ন না হয়। কিন্তু বড়রা যদি তাকে নিয়ে কথা বলেন তাতে কষ্ট পান না তিনি।
কথা কেন বললেন তিনি সেই প্রশ্ন যখন আসে তার কাছে তিনি জানান,’ কারণ তারা তো নিজেরা আমার চেয়ে বেশি ভিলেন। আমার থেকে বেশি নোংরা। যেসব চরিত্র করতাম সেই চরিত্রগুলোর চেয়েও বেশি নোংরা তারা। তাদের নোংরামি দেখেই আমি অভিনয় নোংরা লোকটা হতে পেরেছি। বাস্তব সমাজের খারাপ লোক গুলোই আমাকে বদমাইশের চরিত্রে অভিনয় করতে অনুপ্রাণিত করেছে। ওদের নোংরামিটা দেখতে আমার ভালো লাগতো’।
বাংলা সিনেমায় তিনি স্ট্যাম্প মারা ভিলেন। কিন্তু এখন সেই স্টাম্প কাউকে দিতে পারবেন তিনি? সিনিয়র হিসেবে কোন যোগ্য ভিলেন দেখতে পাচ্ছেন কি এই সময়? উত্তরে জানান,’ এখন সেটা সম্ভব নয় কারণ সবকিছু পাল্টে গিয়েছে। সবকিছুর পরিবর্তন হয়েছে সেটা ভালো না খারাপ হয়েছে বলতে পারব না। আগে যেভাবে গল্প তৈরি হতো এখন একেবারেই সেভাবে তৈরি হচ্ছে না। এখন তো আকাশে উড়ে গিয়ে মারপিট হচ্ছে। তখন ছিল পরিবারভিত্তিক গল্প পরিবারের মেজদা মেজ ঠাকুরপো এরাই হতেন ভিলেন। তারপর পাড়ায় কিছু ভিলেন থাকতেন। সেসব গল্প তো এখন পাওয়াই যায় না। তাই ভিলেনের সংজ্ঞা পাল্টে গিয়েছে’।
তবে বাস্তবের ভিলেন চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন উঠতেই দুর্দান্ত উত্তর দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন এখনকার সমস্ত রাজনৈতিক নেতারাই ভিলেন। তারাই দেশটাকে সর্বনাশের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। না হলে কোটি কোটি টাকা বালিশের মধ্যে লেপের খোলসের মধ্যে পাওয়া যায়!
তবে তার চোখে পর্দার ভিলেন প্রাণ। তিনিও বাস্তবে মাটির মানুষ। এখনকার সময় ভিলেন বলতে ধীরাজ ভট্টাচার্য বিকাশ রায় অন্যতম।
কিন্তু এখন আর সেভাবে তাকে ভিলেন হিসেবে দেখা যায় না এমনটা কেন? পর্দার ভিলেন জানান,’ মানায় না তাই করি না। এখন কেউ পারবে করতে? ধুমকেতু ছবিতে ছবি বিশ্বাস ভিলেন ছিলেন। সেরকম চরিত্র পেলে আমি নিশ্চয়ই করব। দেবেন কেউ সেরকম চরিত্র আমাকে’?