টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী দোলন রায়ের মতে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া ‘মুখ নেই কোনো’ – কিন্তু কেন এমন উদার বিশ্বাস অভিনেত্রীর?
দোলন রায়, প্রথমত বাংলা টেলিভিশন জগতের অন্যতম জনপ্রিয় এবং পরিচিত একটি মুখ। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বাংলা টেলিভিশন জগতে রাজত্ব করেছেন তিনি। যদিও শুধু ছোট পর্দা নয় কয়েক দশক ধরে দাপটের সাথে অভিনয় করেছেন বড় পর্দাতেও। অভিনেত্রী অভিনয় এই দীর্ঘ এতগুলি দর্শক ধরে মানুষের মনের মনিকোঠায় রয়েছে। তবে তাঁর সম্পর্কে একটা কথা টলিপাড়ার অন্ধরে শোনা যায় যে অভিনেত্রী নাকি মুখের ওপর নিজের মনের কথা বলে দিতে দু’বার ভাবেন না। সম্প্রতি অভিনেত্রীর একটি সাক্ষাৎকার চূড়ান্ত ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। যদিও এই সাক্ষাৎকারটি অভিনেতা দিয়েছিলেন পুজোর কিছুদিন আগে। সেখানেই তাঁকে বঙ্গের বর্তমান রাজনীতির পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আজকের যে পরিস্থিতি তা ভালো লাগছে না। তবে এই পরিবর্তন তো আমরাই এনেছি। বিক্ষুব্ধ বামপন্থীরাই তো তৃণমূলকে নিয়ে এসেছি। আমার মনে হয় একসঙ্গে কাউকে বেশিদিন রাজত্ব করতে দেওয়া উচিত নয়। এবার ধরলাম তৃণমূলের পর আর কেউ আসবে। কিন্তু প্রশ্ন হল কোন দল আসবে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কার মুখ আপনার মনে আসছে। কোনও দলেরই তো নেই– তা সে সিপিএম হোক, কী বিজেপি বা কংগ্রেস’।
তাঁর সংযোজন, ‘এটা আমার খুব ভয় লাগে। মুখ নেই তো কোনও। বুদ্ধদেববাবুর পর তো মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়কে মনে হয়েছিল। মুখ যতদিন না তৈরি হবে এরাই থাকবে। কাকে ভরসা করব। ১৫ বছর বা ২০ বছর কোনও দল থাকলে দুর্নীতি আসবেই। একটুর জায়গায় বেশি দুর্নীতি আসবে। এর আগে কি ধর্ষণ বা খুন হয়নি!’
অভিনেত্রী মনে করেন বর্তমানে সংবাদমাধ্যমের জন্য তাও কিছু খবর তৎক্ষণাৎ মানুষের সামনে আসছে। কিন্তু আগে তো এমন হতো না আগে শুধুই পরের দিন সকালে খবরের কাগজ হাতে পেলে তবেই খবর জানা যেত। তিনি বলেন তাঁর মতে এখন দেশ চালাচ্ছে মিডিয়া। একমাত্র মিডিয়াই পারে একটা সরকারকে গঠন করতে বা একটা সরকারকে ফেলে দিতে। তাই অভিনেত্রী একেবারেই পুরোনো দিনের রাজনীতির সঙ্গে এখনকার রাজনীতিকে তুলনা করতে নারাজ।
রাজনৈতিক মতামতের ক্ষেত্রে বামপন্থী হিসেবেই পরিচিতি রয়েছে অভিনেত্রীর। তবে নিজেকে তিনি একজন বিক্ষুব্ধ বামপন্থী বলেন। টলিউডের রাজনীতির ক্ষমতায়ন নিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘টলিউড ইন্ডাস্ট্রি বাম জামানায় যা ছিল তার থেকে এখন অনেক উন্নত হয়েছে। তখন চেষ্টা করেও টেকনিশিয়ান স্টুডিয়ো বানানো যায়নি। অনেক আন্দোলন হয়েছে। সবসময়ই খারাপ-ভালো থাকবে। কিন্তু এখন টেকনিশিয়ানরা অনেক ভালো আছেন’।
যদিও আবার অনেকের মনে হয় টলিউডে কাজ পেতে গেলে রাজনীতি করতেই হয়। কিন্তু একথা একেবারেই মানতে নারাজ অভিনেত্রী। নিজের বিষয়ে রাজনীতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যাই কারণ ভালো লাগে। বয়স হচ্ছে, একটা রাজনৈতিক দলকে সাপোর্ট করাটা তো আমার কর্তব্য। এটা ভুল কথা যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে কেউ কাজ পায় না। আগে লোক বলত পরিচালক-প্রযোজকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নেই বলে কাজ পাই না। আমি মনে করি না, এরকম কিছু আছে’।
অভিনেত্রীর ছবি পাকা কথা প্রসঙ্গে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমরা একটা হাসির ছবি বানিয়েছিলাম পাকা কথা। যা করোনা পরবর্তী সময়ে খুব দরকার ছিল। নিষ্পাপ নির্মল হাসির গল্প। আড়াই ঘণ্টা সিনেমা হলে হাসবে তারপর বাড়ি চলে যাবে। সোহম ছিল সেই ছবির নায়ক। সেই সিনেমাটাও তো হল পেল না। মাত্র ৩টে হল পেল। এখেনা তুমি কী বলবে রাজনীতির জন্য হল পায়নি?’
প্রসঙ্গত এই সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বাম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাথে তৃণমূল নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা করে বলেছেন, ‘খারাপ-ভালো মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাপারে কীভাবে বলব। যোগ্যতাও নেই, ইচ্ছেও নেই। একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই। আপনারা নিজেদের মতো বুঝে নেবেন। একটা সময় বামফ্রন্ট সরকারের প্রয়োজনে রাস্তায় হেঁটেছি। আশুতোষ কলেজের সামনে থেকে হেঁটে শহিদ মিনার অবধি গেলাম আবার ফিরে এলাম। বুদ্ধদেববাবু কোনওদিন ফিরে একটা ধন্যবাদ জানাননি। তখন যদিও ব্যাপারটা বুঝিনি’।
তাঁর সংযোজন, ‘প্রথমদিকে আমি্ তৃণমূলের মঞ্চে যেতাম না। প্রথম যখন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গেলাম উনি এগিয়ে এসে কথা বলেছিলেন। যেন ঘরোয়া কোনও কথা বলছেন। কোনও খাওয়াদাওয়া হলে দাঁড়িয়ে থেকে বলেন আরেকটু নাও, এটা নাও। এত আন্তরিক ব্যবহার আগে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর থেকে পাইনি। পুজোতে জামা পাঠান, জন্মদিনে শুভেচ্ছা বার্তা। এই হৃদ্যতা বিনিময়ই ওঁর প্লাস পয়েন্ট। এই কালচারটা ছিল নাকি আমাদের সিপিএমের সময়’!
আবার আলাদা করে দোলন তৃণমূল নেত্রী মমতা প্রসঙ্গে বলেন, ‘যে কাজ করবে তার ভালোও হবে, খারাপও হবে। সব খারাপকে কখনই সমর্থন করা যায় না। অন্ধ তো নই। তবে ভালো অনেক হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেষ্টা করেছেন ভালো করতে’।