মেয়ে দেখলেই লাল পড়ত, জোর জবরদস্তি গাড়িতে তুলতেন তাদের! আশির দশকের ‘খারাপ ছেলে’ সৌমিত্রর শেষ বয়স কিন্তু কেটে ছিল মারাত্মক অর্থকষ্টে
সিনেমাতে নায়ক নায়িকা ততটা জনপ্রিয়তাই পেতেন না যদি না খলনায়ক বা খলনায়িকা আসতেন। যে কোন সিনেমার প্রাণ হয়ে থাকেন এই চরিত্রগুলি। তেমনই আশির দশকে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি(Tollywood) পেয়েছিল এমন এক দাপুটে খলনায়ককে যার নাম সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়(Soumitra Banerjee)। অনেকেই তাকে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে বলে ভুল করতেন। তবে তার বাবার নাম ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় হলেও তিনি অভিনয় জগতের ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নয়। হুগলির পান্ডুয়ার বাসিন্দা ছিলেন তিনি।
একটা সময় মেয়েরা তাকে খারাপ ছেলে বলতো। তাকে দেখলেই গা জ্বলে যেতো দর্শকদের। এমনকি বাংলা সিনেমাতে রাস্তাঘাটে মেয়েদের টোন টিটকিরি কেটে বেড়ানো স্বভাব ছিল তার। এইজন্য অবশ্য কম মার খেতে হয়নি অভিনেতাদের কাছে।
সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় ঢুলুঢুলু চোখ আর তার বিখ্যাত সংলাপ মেয়ে দেখলেই বলতেন ‘মালটাকে গাড়িতে তোল’ এখনো মনে রেখে দিয়েছেন দর্শক। এমনকি বখে যাওয়া ছেলের উদাহরণ হিসেবে তার নাম উঠে আসতো। ১৯৬৪ সালের সুভা ও দেবতার গ্রাস ছবিতে অভিনয় করেই পা রাখেন টলিউডে। মাত্র ১০ বছরে হাতে খড়ি হয়েছিল অভিনয়ের।
এরপর ১৯৮২ সালে মিঠুন চক্রবর্তীর দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে ত্রয়ী ছবিতে কামব্যাক করেছিলেন সৌমিত্র। তারপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একটার পর একটা হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। আশির দশকের খলনায়ক মানেই সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ঝুলিতে রয়েছে প্রায় দেড়শ সিনেমা।
অমর সঙ্গী, ইন্দ্রজিৎ, জীবন যুদ্ধ, গুরুদক্ষিণা একাধিক ছবিতে দেখা গেছে তাকে। যদিও শেষবার তাকে পর্দায় দেখা গিয়েছিল ১৯৯৯ সালে খেলাঘর ছবিতে। জানলে অবাক হবেন অভিনয়ের পাশাপাশি গানের গলা ছিল খাসা। তবে অভিনয় জগতে কোনদিনই আসার ইচ্ছা ছিল না তার। বাবা ছিলেন সংগীতশিল্পী। বাবার মতই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতেন কিশোর কুমারের হিট গান। যা শুনে মুগ্ধ হয়ে যেতেন শ্রোতারা।
অভিনয় করতে গিয়ে আলাপ হয়েছিল তৎকালীন জনপ্রিয় খলনায়িকা রিতা কয়রালের সঙ্গে। তারপর একসঙ্গে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তারা। তবে তাদের বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি। জানা গেছে নিয়মিত মদ্যপান করে বাড়িতে আসতেন তিনি। যার জেরে সাংসারিক শান্তি চরমে উঠেছিল। তারপর বিচ্ছেদ হয়েছিল তাদের। তবে শেষের কিছুদিন চরম অর্থ কষ্টের মধ্যে কাটিয়েছিলেন অভিনেতা। এমনকি কাজ না পেয়ে যাত্রা দলের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। ২০০০ সালে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।