টলিউড

শ্রেয়া ঘোষালের জীবন, ঠিক যেন রূপকথার মত!

বছর আঠেরোর বঙ্গ-তনয়ার সুরে তখন গমগম করছে বলিউড। শ্রেয়া ঘোষাল, বহরমপুরের সদ্য অষ্টাদশে প্রবেশ করা মেয়েটা তখন, বাংলা তথা সমগ্র ভারতবাসীকে তাঁর জাত চিনিয়ে দিয়েছে। বলা বাহুল্য, দেবদাস ছবির এই “ডোলা রে” গানটি দিয়েই, ভারতে এল “শ্রেয়া-যুগ”।

শ্রেয়া ঘোষালের বলিউডে প্রবেশ, খানিক রূপকথার মতই। যে বয়সে শিশুরা মেতে থাকে খেলনা বাটির সংসার নিয়ে, সেই বয়সে শ্রেয়া মেতে ওঠে সুর এবং ছন্দের খেলায়। ষোলো বছর বয়সে অংশ নেন জি টিভির সারেগামাপা-এ। অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বনামধন্য সুরকার কল্যাণজী বীরজী শাহ।

ছোট্ট শ্রেয়ার গায়কীতে আচ্ছন্ন হয়ে ওঠেন স্বয়ং কল্যাণজী। নিজের হাতে তালিম দিতে চান ষোড়শী শ্রেয়াকে। তাঁর পরামর্শেই, বহরমপুর থেকে মুম্বই-নিবাসী হয়ে ওঠেন ঘোষাল পরিবার। প্রায় দেড় বছর ধরে কল্যাণজীর তত্ত্বাবধানে সুর সাধনা করেছেন শ্রেয়া।

আরও পড়ুন : ঐশ্বর্য-অভিষেকের বিচ্ছেদের গুঞ্জন! হঠাৎ ভাইরাল সলমনের ভিডিও

শুধু একবার নয়, দু দুবার সারেগামায় অংশ নিয়েছিলেন গায়িকা। আর তখনই তাঁর জীবনে আসে আরও বড় ‘টুইস্ট’। এইবার শ্রেয়া তাঁর গায়কী দিয়ে মন জয় করে নেন পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালির। ব্যাস! তখনই শুরু হয় এক রূপকথার!
সঞ্জয় লীলা বনশালি শ্রেয়ার গানে মুগ্ধ হয়ে, তাঁর ছবি “দেবদাস” এর একটি গানের জন্য তাঁকে নির্বাচন করেন। তখন শ্রেয়ার বয়স মাত্র আঠারো। কবিতা কৃষ্ণমূর্তির মত গায়িকার পাশে, স্থান পান বহরমপুরের ছোট্ট মেয়েটা।

অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত এবং অভিনেত্রী ঐশ্বর্য বচ্চনের হয়ে কণ্ঠ দেন কৃষ্ণমূর্তি এবং শ্রেয়া। বলা বাহুল্য, শুধু সেই সময় নয়, এখনও পর্যন্ত দুই অভিনেত্রী এবং দুই গায়িকার কণ্ঠে এই গান, সিনেমার ইতিহাসে “আইকনিক” হয়ে রয়েছে।

সময়ের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে যেতে থাকল “শ্রেয়া-ম্যাজিক”। বাংলা, উর্দু, মালায়ালাম, তেলেগু, তামিল, সকলেই হলেন এই কোকিল কণ্ঠির কণ্ঠে ফিদা! শ্রেয়া গান ধরলে যেন মনে হতে লাগল, জড়ের মধ্যেও যেন হয়ে উঠবে প্রাণের সঞ্চার! দূর হয়ে যাবে, মানসিক অস্থিরতা!

শ্রেয়া ম্যাজিক, বাঁধ মানলো না কোনও সীমাবদ্ধতার। বিদেশের বুকেও বসল রাজ সিংহাসনে। ২০১০ সালে আমেরিকার তৎকালীন গভর্নর, শ্রেয়া ম্যাজিকে মুগ্ধ হয়ে, আমেরিকায় একটি বিশেষ দিনের নামকরণ করে দিলেন গায়িকার নামে। ২০১০ থেকে প্রতি বছরই, ২৬ জুন পালন করা হয়ে থাকে “Shreya Ghoshal Day”।

প্রায় দু দশক ধরে ভারতের সঙ্গীত রাজত্বে, গায়িকাদের মধ্যে একাই রাজ্যপাট নিজের কাঁধে বহাল ভাবে তুলে ধরে আছেন শ্রেয়া। এক নয়, দু বার নয়, প্রায় পাঁচবার ভূষিত হয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে।

আরও পড়ুন : শুধু গান নয়, বিরিয়ানি বানাতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন রাশিদ খান! উস্তাদজির মৃত্যুর পর ভিডিও প্রকাশ্যে আনলেন মীর

বলা বাহুল্য, শ্রেয়া প্রমাণ করেছেন, একজন গুণী শিল্পী হওয়ার আগে একজন ভালো মানুষ হয়ে ওঠা সবচেয়ে বেশি দরকার। যে শ্রেয়ার কণ্ঠে প্রাণের সঞ্চার ঘটে, যে শ্রেয়ার কণ্ঠে থেমে যায় ভেতরের ঝড়, সেই শ্রেয়াও কাঁদেন কম বয়সী প্রতিযোগীদের গান শুনে। ঠিক এমন দৃশ্যেরই সাক্ষী থেকেছেন দর্শক ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চে। শ্রেয়াকে এইভাবে একজন প্রতিযোগীর গান শুনে আবেগপ্রবণ হতে দেখে, অনুগামীদের মনে আরও একবার মানুষ হিসেবে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলেন গায়িকা।

Back to top button

Ad Blocker Detected!

Refresh