কেকে কে দু’চোখে সহ্য করতে পারতেন না শ্রীজাত, ১৬ বছর ধরে তার কোন গানই শোনেননি তিনি! সোশ্যাল মিডিয়ায় কেকে কে নিয়ে মুখ খুললেন শ্রীজাত
শেষ হলো একটা গোটা জেনারেশনের ভালোবাসা, ইমোশন। গত ৩১শে মে হঠাৎই সকলকে অবাক করে কাঁদিয়ে চলে গেলেন ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় সেরা গায়ক কেকে। কয়েক ঘন্টা আগে পর্যন্ত যেই মানুষটা প্রাণোচ্ছল ভাবে মঞ্চ মাতিয়ে গিয়েছিলেন সকলের মনে ঝড় তুলে গিয়েছিলেন নিজের গানের মাধ্যমে সেই মানুষটা আর নেই আর কোনদিনও তার গান শোনা হবে না। এটা ভেবেই যেন চোখের কোনায় জল টা ধরে রাখতে পারছে না কেউ। কেকের কন্ঠের সেই গানটাই যেন সত্যি হয়ে গেল ‘হাম রাহে ইয়া না রাহে কাল’। সত্যি নিঃশ্বাসের বিশ্বাস নেই। জীবন খুবই ছোট সেটা বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন গায়ক। দু’দিন আগেই কলকাতাতে এসেছিলেন বিভিন্ন কলেজের অনুষ্ঠানে তাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছিল। গতকাল কলকাতার নজরুল মঞ্চে সেরকমই এক অনুষ্ঠানে গান করছিলেন তিনি। হঠাৎই তার শরীর খারাপ করতে শুরু করে এরপরই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় তার মধ্য কলকাতার হোটেলে যেখানে তার থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। সেই হোটেলে সিঁড়ি থেকে উঠতে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গেই তাকে সিএমআরআই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
গায়কের এই অকাল মৃত্যুর কথা শোনার পর থেকেই সারা সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে তাকে নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। সকলেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁকে স্মরণ করেই শোকবার্তা জানাচ্ছেন প্রত্যেকে। কারণ কেকে শুধুমাত্র একজন গায়ক ছিলেন না তিনি মানুষের অনুভূতির সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যেতেন। গায়কের মৃত্যুর পর গীতিকার সৃজিত মুখোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়া একটি লেখেন ‘KK-র গান আমার অসহ্য লাগে। গত ১৬ বছর ধরে অসহ্য লাগে। সেই ২০০৬-এর ডিসেম্বর থেকে আজ অবধি KK-র গান আমি সহ্য করতে পারি না। ক্যাব-এর রেডিও-তে হঠাৎ বেজে উঠলে চালককে তৎক্ষণাৎ বলি চ্যানেল সরিয়ে দিতে, কোনও জমায়েতে হুট করে বেজে উঠলে সন্তর্পণে উঠে বাইরে চলে যাই। এতটাই অসহনীয় আমার কাছে, KK-র গান, গত ১৬ বছর ধরে। টানা ১৬ বছর, আমি KK-র গান শুনিনি। সত্যি বলতে কী, পালিয়েছি তাঁর কাছ থেকে’।
“আন্তরিক ক্ষরণের কথা সমক্ষে তুলে ধরিনি কখনওই, জীবনের প্রতি সংকোচ আর স্মৃতির প্রতি সম্ভ্রম থেকেই। কিন্তু কিছু আকস্মিকতায় সেসব বাঁধ, সেসব আড়ালও হয়তো টুটে যায় সাময়িক ভাবে। ছোট ভাই, যার আদরের নাম পুশকিন, তার প্রিয় গায়ক ছিলেন KK। আর তার হাত ধরে আমারও। গিটারে তার হাত চলাফেরা করত চমৎকার, আর সুরে গলাও খেলত দিব্যি। তার পড়াশোনা আর পরীক্ষার চাপের ফাঁকে ফাঁকে আমি তাকে জোর করে বসাতাম, ‘গান শোনা দেখি দু’খানা’। এমন বললে সে দু;খানা গানই গেয়ে উঠত কেবল। ‘ইয়ারোঁ, দোস্তি বড়ি হি হসীন হ্যায়’, আর ‘হম রহেঁ ইয়া না রহেঁ কল, কল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল’।”
আসলে শ্রীজাত জানান এক বাইক দুর্ঘটনায় হঠাৎই প্রয়াত হন শ্রীজাতর ভাই পুশকিন। তিনি ছিলেন কেকে র অন্ধভক্ত। আর ভাইয়ের এই হঠাৎ মৃত্যু একেবারেই মেনে নিতে পারেননি শ্রীজাত। যার কারণে গত ১৬ বছর ধরে কেকের গান তিনি শোনেন না। কোন অনুষ্ঠানে কেকের গান শুরু হলে সেখান থেকে উঠে আসেন, পিকনিকের গান বাজলে সেখান থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। তিনি একেবারেই সহ্য করতে পারেনা তারপর থেকে। আর আজকে একইভাবে তার ভাইয়ের মতোই অকালে চলে গেলেন কেকে। আর এটাই ইমোশনাল করে তুলেছে শ্রীজাত কে।