সারাদিন রুপালি পর্দায় যারা দর্শকদের প্রতিনিয়ত এন্টারটেইন করে যাচ্ছে, মুখে হাসি ফোটাচ্ছে সবথেকে কষ্টকর জীবন মনে হয় তাদেরই অতিক্রম করতে হয়। দর্শকরা খোঁজ রাখেন না তাদের কঠিন পরিস্থিতির কথা। প্রত্যেকের জীবনেই সফল হতে গেলে তার আগে যে ধাপগুলো সামনে এসে উপস্থিত হয় সেগুলো সব সময়ই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়।
বিশ্বরূপ সেনগুপ্ত, যে দর্শক মহলে যীশু সেনগুপ্ত নামে খ্যাত। তার জীবনে হতাশা একটা বড় ভূমিকা পালন করে। কেরিয়ার শুরুর প্রথম দিকে তার কাছে যেন সাফল্য এসেও আসছিল না। সাফল্যের দরজায় দাঁড়িয়ে বারবার তাকে ফিরে যেতে হয়েছে।১৯৭৭ সালে তার জন্ম হয়। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের ভালো দক্ষতা ছিল, কিছু কিছু খেলায় সাব জুনিয়র খেলায় বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি।
মানুষের মধ্যে নানা রকম অন্ধ বিশ্বাসের মধ্যে অন্যতম হলো ‘ অপয়া ‘ অন্ধবিশ্বাসটি। এই শব্দটি ফেসবুকের কাছে খুবই পরিচিত। বলাবাহুল্য এই শব্দটি ছিল তার প্রথম জীবনের নিত্য সঙ্গী।
বহু সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু তার পোড়া কপালের জন্য কোনটাই তার কাজে লাগেনি। একের পর এক সিনেমা মুখ থুবরে পড়েছে বক্স অফিসে। জনপ্রিয়তা পায়নি একদমই। তিনি ভাল সঞ্চালক হলেও হয়ে উঠতে পারছিলেন না ভালো অভিনেতা।
যীশু সেনগুপ্ত হীরা রামচন্দ্র কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রী পাস করেছিলেন। এরপর কিছুদিন তিনি একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেছিলেন। বাবা উজ্জ্বল সেনগুপ্তের হাত ধরেই তার অভিনয় জগতে প্রথম পা রাখা। বাবা উজ্জ্বল সেনগুপ্ত বেঙ্গলি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একজন জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন।
তার হাতেখড়ি হয়েছিল মহাপ্রভু নামক এক সিরিয়ালের মাধ্যমে। যেখানে তিনি মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য এর ভূমিকায় অভিনয় করতেন। এরপর তিনি নিজের প্রযোজিত অপরাজিত নামের একটি সিরিয়ালে অভিনয় করেন।
ইতিমধ্যে পরপর দুটি সিরিয়ালে অভিনয় করার পরেও কেউ যেন তার দিকে ঘুরে তাকাচ্ছিল না। ১৯৯৯ সালে প্রিয়জন নামক একটি সিনেমা করেন, কিন্তু এখানেও তার পোড়া কপাল সাথ দেয়নি। বক্সঅফিসে এই ছবিটিও চরম ব্যর্থতার মুখে পড়ে।
প্রিয়জনের পর ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে তৈরি হওয়া একটি ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ফ্রী সিনেমাটি সেই বছর বাংলাদেশের খ্যাতি অর্জন করলে, কিছু কাজে এসেছিল তার হাতে। চোরে-চোরে মাসতুতো ভাই, জন্মদাতা, গুরু বেশ কিছু সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি।
নায়ক হিসেবে প্রথম কাজ করেন অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিকের সাথে লাভ বলে একটি সিনেমায়। তার পরেও তিনি বর আসবে এক্ষুনি বলে একটি সিনেমা করেছিলেন। তারপর ‘ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস দ্য ফরগটেন হিরো ‘ বলে একটি সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রেখেছিলেন তিনি।
এরপরও অনেক সিনেমাই পরপর মুখ থুবরে পড়েছে বক্সঅফিসে। কমেডি থেকে শুরু করে রোমান্টিক-অ্যাকশন কোন চরিত্র করেননি এমনটা নয়। অন্যধারার বেশকিছু সিনেমাও তিনি করেছেন। কিন্তু এত কাজ করা সত্ত্বেও কোনোভাবেই বক্স অফিসে কোন সিনেমাই তাকে সাফল্য এনে দিতে পারছিল না।
কাজেই সব পরিচালকদের মনে আমার ধারণা জন্মে গেলো তিনি সিনেমায় করবেন, সেটাই সুপার ফ্লপ হবে। কোন কোন পরিচালক তাকে অপয়া তকমা দিতেও কেউ শুরু করলো। দিনদিন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন তিনি। এতকিছুর পরেও তিনি পাকাপোক্তভাবে কোন জায়গায় তৈরি করতে পারছিলেন না।
আস্তে আস্তে নিজেকে যখন এক ঘরে করে নিয়েছিলেন। ঠিক সেই সময় পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ তার প্রতিভাকে চিনতে পারেন। ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত দ্য লাস্ট লিয়ার, সব চরিত্র কাল্পনিক, আবহমান, চিত্রাঙ্গদা, নৌকাডুবি যীশু সেনগুপ্ত অভিনীত এই ছবিগুলি দর্শকের মন জয় করে নেয়।
এরপর ২০১৪ সালে শ্রীজিৎ মুখার্জী পরিচালিত এ অভিনীত রোহিত চরিত্রটি তাকে সাফল্যের দরজা খুলে দিয়েছিল। এরপর অঞ্জন দত্ত পরিচালিত ব্যোমকেশ চরিত্রে দর্শকের মনে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি, সেই সময় দর্শক যীশু সেনগুপ্ত অভিনীত চরিত্রে অন্য কাউকে দেখতে স্বস্তি বোধ করছিলেন না।
তারপর থেকে নানা সিরিয়াল সিনেমা সবেতেই তিনি দর্শকের মন জয় করতে থাকেন। পাশাপাশি সঞ্চালক হিসেবে ও তিনি দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন। মূলত জিবাংলা সম্প্রসারিত সারেগামাপা এর সঞ্চালনায় যীশু সেনগুপ্ত ব্যতীত অন্য কাউকে দেখতে আজও অভ্যস্ত নয়। আগের বছর এই রিয়েলিটি শোয়ের আবির করলেও বেশিরভাগ দর্শক মতামত অনুযায়ী এই সঞ্চালনের জন্য যীশু সেনগুপ্ত বেস্ট।
কাজের প্রতি নিষ্ঠা এবং ভালোবাসা দিয়ে তিনি প্রমাণ করে দেন জীবনে হাজার ওঠাপড়া আসবেই, আসবেই কঠিন পরিস্থিতি, কিন্তু তার জন্য ভেঙেপড়া একদমই উচিত না।