এক সময় তাকে ছাড়া ছবি করতে চাইতেন না সত্যজিৎ রায়, ছবি বিশ্বাসের মৃত্যু চলচ্চিত্র জগতে নিয়ে এসেছিল বিরাট ক্ষতি
একসময় যিনি নিজের রাজত্ব চালিয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের উপর, য়ার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে সত্যজিৎ রায় নিজে স্বীকার করেছিলেন তার প্রতিভার কথা। সেই মানুষটার মাত্র ৬২ বছর বয়সেই জীবনাবসান ঘটে। চলচ্চিত্র জগতে অন্ধকার নিয়ে এনেছিল যার মৃত্যু। যার মৃত্যুর কারণে সত্যজিৎ রায় বিভিন্ন ছবি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কথা হচ্ছে চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র ছবি বিশ্বাসকে নিয়ে।
বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের জন্ম ১৯০০ সালের জুলাই মাসে যার আসল নাম ছিল শচীন্দ্রনাথ। কিন্তু নিজের অভিনয় জগতে এবং কর্মজীবনে ছবি নামটি ব্যবহার করতেন। পড়াশোনায় দুর্দান্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। স্বয়ং সম্রাট’ আকবরের কাছ থেকে বিশ্বাস উপাধি পেয়েছিল তাদের পরিবার। পড়াশোনার পাশাপাশি সঙ্গীত চর্চা ও করেছেন বহুদিন। ওস্তাদ জামিরুদ্দীন খাঁ সাহেবের কাছ থেকে গানের তালিম নিয়েছিলেন।
অভিনয় জগতে হাতেখড়ি হয়েছিল দীনবন্ধু মিত্রের বৈঠকখানার বারবেলা বৈঠক থেকে। প্রথম অভিনয় ভীষ্ম নাটক তারপর থেকেই অভিনয় জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া। ১৯৩৮ সালে প্রথম নাটক নিকেতন মঞ্চে একজন পেশাদার শিল্পী হিসেবে বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার। এরপর হঠাৎই রুপোলি পর্দায় সুযোগ আসে। ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’ ছবির মাধ্যমে পা রাখলেন রুপোলি পর্দায়। কালী ফিল্মস এর ব্যানারে তার প্রথম সেই ছবি। নিজের অসাধারণ অভিনয়ের জন্য প্রশংসা পেয়েছিলেন সকল পরিচালকের কাছ থেকে। হাঁটা চলার ভঙ্গি কথা বলার ভঙ্গি দেখে মুক্ত হোন সকলে। তখনকার দিনে তার প্রতিযোগী ছিল প্রমথেশ বড়ুয়া।
এরপর একদিন অফার আসে সত্যজিৎ রায়ের কাছ থেকে। সত্যজিৎ রায়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবির জন্য ছবি বিশ্বাসকে প্রস্তাব দেয়া হয়। সিনেমার স্ক্রিপ্ট পরে প্রথমে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে পরবর্তীকালে যখন শোনেন দীর্ঘদিন জন্য আউটডোর শুটিং চলব তখনই তিনি প্রস্তাব নাকচ করে দেন। তিনি জানিয়েছিলেন সোমবার থেকে বুধবার আউটডোর শুটিং করতে পারবেন তবে বৃহস্পতিবার ই তাকে কলকাতায় ফিরতে হবে যাতে সত্যজিৎ রায় রাজি হননি। সত্যজিৎ রায় কে ঐদিন খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছিল। থিয়েটারে এসে সে কথা সবাইকে জানিয়ে ছিলেন ছবি বিশ্বাস। থিয়েটারের সকল লোকই তাকে বলেছিল যে ছবি যাবে আসবে তবে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজের সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। এরপরই সম্মতি জানিয়ে ছিলেন ছবি বিশ্বাস। এরপর একে একে জলসাঘর , দেবী, পরশ পাথরের মতো চলচ্চিত্র করেন কিংবদন্তি এই অভিনেতা।
যে সকল ছবিতে অভিনয় করার পর সত্যজিৎ রায় নিজে স্বীকার করেছিলেন যে ছবি বাবুকে ছাড়া এই চলচ্চিত্র কিছুতেই সম্ভব হতো না। নিজের কাজের জন্য অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছিলেন বিশেষ করে কাবুলিওয়ালা ছবি করার পর তার জনপ্রিয়তা সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। বম্বে মাদ্রাজ এর মত বড় বড় শহরে তাঁর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু এই ব্যক্তি মাত্র ৬২ বছর বয়সে ১৯৬২ সালের ১১ই জুন সকলকে ছেড়ে চলে যান। নিজের পৈত্রিক বাড়ি যাওয়ার পথে মধ্যমগ্রামে গঙ্গানগরে উল্টোদিক থেকে আসা একটি মাল বোঝাই করা গাড়ি ধাক্কা মারে ছবি বিশ্বাসের গাড়িকে। ঐদিন ড্রাইভারের সিটে নিজে ছিলেন। স্টিয়ারিং এর ধাক্কায় তার বুকের পাঁজর ভেঙ্গে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ডাক্তাররা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
তখনকার প্রধানমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায় নিজে তার বডি পোসমাডাম এ পাঠিয়ে ছিলেন। এরপর সত্যজিৎ রায় নিজেই জানিয়েছেন যে চলচ্চিত্র জগতের যা ক্ষতি হলো তা একদম অপূরণীয় অনেক ছবি চরিত্র অপূর্ণ থেকে গেল।