‘বন্দে মাতরম, জয় জয় ভারতবর্ষ’, মন্দিরের দেবী কালী পূজিত হন ভারতমাতা হিসাবে! রইল মন্দিরের অজানা ইতিহাস
পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে রয়েছে ভবানী পাঠকের পুরানো আরাধ্যা কালিকা দেবীর মন্দির। দেবী এখানে পূজিত হন ডাকাত কালী হিসাবে। দুর্গাপুরের প্রধান প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টারের অম্বুজা কলোনিতে এই মন্দির অবস্থিত। তবে মন্দিরের পরিবেশ বেশ গা ছমছমে। শহরের সব থেকে অভিজাত এলাকায় অবস্থিত হয়েও এই মন্দির চত্বর একেবারে অনাড়াম্বর।
আমাদের পশ্চিমবঙ্গে কোথাও দেবী কালী পূজিত হন শক্তির উৎস রূপে আবার কোথাও পূজিত হন রক্ষাকর্ত্রী রূপে। এই মন্দিরে সাধনার মূল মন্ত্র বন্দেমাতরম জয় জয় ভারত বর্ষ। আজ ১৫ ই আগস্ট, স্বাধীনতা দিবস মন্দিরের সেখানে শোভা পায় ভারতবর্ষের তেরঙ্গা পতাকা।
এই মন্দিরের মা পূজিত হন ভারতমাতা রূপে। সত্যিই এরকম আজকাল দেখাই যায় না। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পুরনো মন্দিরে দেবী মূর্তি পিছনে অখন্ড ভারতের মানচিত্র রাখা হয়েছিল। তবে সেই মানচিত্রের যদিও এখন আর অস্তিত্ব নেই।
মন্দিরের পরিবেশ সবুজে ঘেরা। যখন পূজার মন্ত্র শোনা যায়, তখন উচ্চারিত হয়,‘বন্দে মাতরম্, জয় জয় ভারতবর্ষম। ঐক্যং শরনম্ গচ্ছামি। সত্যম্ শরনম্ গচ্ছামি। স্বরাজম্ শরনম্ গচ্ছামি’। মন্দির খোলা এবং মন্দির বন্ধের সময় এই মন্ত্র উচ্চারণ হয়।
শোনা যায় স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এই মন্দির ছিল বিপ্লবীদের প্রধান আস্তানা। বিপ্লবীদের যাতায়াত বাড়তে থাকে স্বাধীনতা সংগ্রামী এই মন্দিরে এসে আস্তে আস্তে আশ্রয় নিতে থাকেন। এমনকি ব্রিটিশ সৈন্যদের পরাস্ত করার জন্য ব্লুপ্রিন্ট তৈরি হতো এইখানেই।
এই মন্দিরের আরাধ্যার কাছে নতমস্তকে প্রণাম জানাতে বিপ্লবীরা তার পরেই রওনা হতে নিজেদের কাজে। এমনকি কথিত আছে দেশ ছাড়ার আগে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কোন কারনে একবার এই মন্দিরে এসেছিলেন এবং রাত্রি যাপন করেছিলেন তিনি। পরের দিন সকালে মায়ের পুজো দিয়ে ফিরে যান।
বর্তমানে মন্দিরের আরাধ্যার সংস্কার করা হচ্ছে। বিপ্লবীদের নানান রকম রীতি পূর্ণমাত্রায় এই মন্দিরে এখনো পুরনো মর্যাদায় পালন করা হয়ে থাকে। দেবের বই দিতে এখনো লেখা রয়েছে বন্দেমাতারাম শব্দটি। মন্দিরে প্রবেশের পথেই চোখে পড়বে এটি। ঐতিহাসিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দেবী কালীকে ভারতমাতা রূপে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিপ্লবীরাই।
তবে এই সিদ্ধান্তের পেছনে যে কারণ লুকিয়ে আছে তা হল বিপ্লবীরা ব্রিটিশদের বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলাম ভারতমাতা যেমন মাতৃরূপে তার সন্তান দেশবাসীকে রক্ষা করতে পারে তেমনি মহাখালীর উপসংহার করতে পারে নিজের শত্রুদেরও।