মাত্র ১ টাকায় চপ, ফুলুরী, সিঙ্গারা, রসগোল্লা, ল্যাংচা! ঘুগনি মাত্র ২ টাকায়? হতদরিদ্র মানুষের পাশে হিমাংশু
একুশ শতকে দাঁড়িয়ে ১ টাকায় কোন জিনিস পাওয়া যেতে পারে বাস্তবে ভাবা তো দূরের কথা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না। যত দিন যাচ্ছে মুদ্রাস্ফীতির জেরে বাজার মূল্য বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যে পেট্রোল ছুঁয়েছে সেঞ্চুরি। রান্নার ভোজ্যতেলও ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু বাজারমূল্য যাই থাকুক না কেন, সেই দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুরের হিমাংশু সেনের। তার দোকানে গেলেই মেলে ১ টাকায় গরম গরম চপ।
গত ৩০ বছর ধরে তার এই দোকান। যেসব মানুষ হতদরিদ্র, যাদের প্রত্যেকদিন দুবেলা-দুমুঠো খাবার জোটে না, তাদের কথা ভেবেই এইরকম দাম নির্ধারিত করেছেন তিনি। ৩০ বছরে মাত্র ২০ পয়সা দাম বাড়িয়েছেন হিমাংশু। শুধুমাত্র আলুর চপ নয়, চাপের সাথে সাথে রয়েছে বেগুনি, ফুলুরি, সিঙ্গারাও। হিমাংশু বাবু জানিয়েছেন, এলাকার বেকারদের কাছে এটা একরকম আত্মনির্ভরতা।
জামালপুর থানার পাঁচড়ায় বাড়ি হিমাংশ সেনের। বাড়ির নিচেই ছোট্ট একটা দোকান তার। নিয়মিত দুপুর ৩ টে থেকে রাত ৯ টা অবধি তার দোকান খোলা থাকে। ভীড়ও হয় প্রচুর। তাকে এই কাজে সাহায্য করেন তার স্ত্রী বন্দনা সেন, ছেলে কাশীনাথ সেন এবং পুত্রবধু শম্পা সেনও।
ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘হিমাংশুবাবুর চপের দোকান’। নাম শুনেই আশেপাশের এলাকা থেকে অনেকেই এসে দেখে যাচ্ছেন। সাথে টেস্ট করে যাচ্ছেন তাঁর এই চপ। চপের সাথে সাথে বিক্রি হচ্ছে রসগোল্লা, ল্যাংচা, মাখা সন্দেশ এবং ঘুগনি। এই ঘুগনির দাম মাত্র ২ টাকা।
একসময় আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিলেননা হিমাংশু বাবুর পরিবার। তখন তাদের ঠিকমত খাবার জুটত না। হিমাংশ সেনের বাবা বিশ্বনাথ সেন অনেকদিন আগে একটা তেলেভাজার দোকান খুলে ছিলেন। তখন মাত্র দাম ছিল ৮০ পয়সা। সে আজ থেকে বহু যুগ আগের কথা। তবে এখন হিমাংশ বাবুর পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল।
হিমাংশু বাবু জানিয়েছেন, “জামালপুর এলাকার গরীব নিম্নবিত্তরা আমার দোকানের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এবং এর জন্য আমি গর্বিত। প্রতিদিন এখানে প্রায় ১০ কেজি বেসনের চপ বিক্রি করি আমরা। ব্যয় থেকে ৫০০-৭০০ টাকা লাভ থাকে তাতেই সংসার চলে যায় আমাদের। কোনদিন এনিয়ে অসুবিধা হয়নি কারোরই। এইভাবে আমি মেয়ের বিয়েও দিয়েছি দোতলা বাড়িও বানিয়েছি।”
বর্তমানে চারিদিকে যেখানে শুধু ভেজাল আর ভেজাল, সেই যুগেও বেঁচে রয়েছেন হিমাংশু সেনের মতো মানুষ গুলো। যারা শুধু নিজেদের স্বার্থের কথাই না, ভাবেন গরিব নিম্নবিত্ত মানুষের কথা। মানবিকতা এ রকমই হওয়া উচিত প্রত্যেকের। সকলের মধ্যে যদি এরূপ মানবিকতা থাকত তাহলে আজ হয়ত সমাজে গরিব শ্রেণী, নিম্নবিত্ত শ্রেণী বলে কিছু হতোনা। বরাবরই যে ব্যক্তির ধন-সম্পদ প্রচুর সেই ব্যক্তি আরো লাভবান হচ্ছেন এবং গরিবেরা চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছেন। কথাতেই আছে, “ইচ্ছা থাকলে এবং মনের জোর থাকলে সব সম্ভব।” হিমাংশু সেনের মতো মানুষ গুলোই এই কথাটি বারবার প্রমাণ করে দিচ্ছেন আজও। বাজারে বেরিয়ে যাদের দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয় ক্রমাগত আপ্লুত তারাও।