একসাথে ৪৩ টি যৌনপল্লীর মালিক ছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর! আজও হাজারো আলোর মধ্যে লুকিয়ে ঠাকুর পরিবারের অনেক অজানা ঘটনা!
সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ থেকে শোভাবাজারের রাস্তা ধরে সোজা হেঁটে গেলেই গৌরীশংকর লেন। আর সেখানেই অবস্থিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ যৌনপল্লী সোনাগাছি। যার নাম কমবেশি সবাই শুনেছে। সাধারণমানুষ তাকে বেশ্যাপাড়া কিংবা রেড লাইট এরিয়া বলে দাগিয়ে দিয়েছেন। এই অঞ্চলটির সঙ্গে যুক্ত এমনই প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি যৌন কর্মীর নিত্যদিনের রুজি-রুটির গল্প।
১৮৫৩ সালে প্রকাশিত একটি সার্ভে রিপোর্ট এ জানা গেছে কলকাতা শহরে ৪৪৪৯ টি ঠেক আছে। যেখানে বসবাস করে ১৩ হাজারের মতো যৌনকর্মী। তবে এরই মধ্যে অন্যতম সারা জাগানো যৌনপল্লী হলো সোনাগাছি। সোনাগাছি সম্পর্কে কথিত আছে যে প্যারিসের যৌনকর্মীরা ও কলকাতার এই যৌন সম্পর্কে জানেন। তবে তৎকালীন সময়ে দ্বারকানাথ ঠাকুর বেশকিছু যৌনপল্লীর মালিক হয়ে উঠেছিলেন।
উনিশ শতকে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপারে বাঙালি সমাজের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন ঠাকুরবাড়ির দ্বারকানাথ ঠাকুর। সাহিত্য সংস্কৃতির পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যে ঠাকুরবাড়ির বেজায় নামডাক ছিল। সাহিত্য সংস্কৃতি বা বিজ্ঞান চর্চা কিছুই বাদ যেত না এখানে।
সুমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ঠাকুরবাড়ির জানা-অজানা বইতে উল্লেখ আছে – “দ্বারকানাথ যখন পৈতৃক বিষয় পান তখন তার আয় ছিল খুবই অল্প। কিন্তু নিজের দক্ষতা, কার্য-কুশলতার মধ্যে ও ইংরেজ বন্ধুদের সাহায্যে তিনি একে একে বহু ভূসম্পত্তির অধিকারী হন। ওড়িশা ও পূর্ববঙ্গে তিনি বহু জমিদারি কেনেন ও সেইসব জায়গায় কুঠিবাড়ি নির্মাণ করেন। দ্বারকানাথের বেলগাছিয়ার বিরাট বাগানবাড়ির তো খুবই নামডাক। সেখানে এক এক রাতে তিনি যেভাবে সাহেব-সুবোদের অ্যাপায়ন করেছেন তার বিবরণ তখনকার দৈনিক পত্রিকাগুলির শিরোভাগে জায়গা পেত। আবার তা ঈশ্বর গুপ্তের ব্যঙ্গ কবিতার বিষয়বস্তুও হয়ে উঠেছিল।”
সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী থেকে জানা যায় প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর কলকাতার একটি এলাকায় প্রায় তেতাল্লিশটি বেশ্যালয়ের মালিক ছিলেন। তবে স্বাভাবিকভাবে এ সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠেছে কি এমন প্রয়োজন হল যে দ্বারকানাথ ঠাকুরকে এতগুলি বেশ্যালয়ের মালিক হয়ে উঠতে হলো!
ইংরেজদের সঙ্গে রীতিমতো টক্কর দিয়েছিলেন ঠাকুর পরিবারের সদস্য। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যের সূত্র ধরেই প্রানের শহর কলকাতায় আগমন হয় প্রচুর রাজকর্মচারীর। তবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিচুতলার কর্মী হওয়ায় বেশিরভাগই ছিলেন অবিবাহিত। এর জন্যই আমোদ ফুর্তির জন্য রাখতেন এক বা একাধিক উপপত্নী। এরা সেই সময় বিবেচিত হতেন ইংরেজ কর্মচারীদের আনন্দের উপকরণ হিসাবে। তবে শুধু ইংরেজি না বাঙালি বাবুর ও আনন্দের উপকরণ ছিল এইসব যৌনপল্লী। যার মধ্যে অন্যতম এই সোনাগাছি।
দ্বারকানাথের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল এই সোনাগাছি। বেলগাছিয়ার বাগানবাড়ি যেমন ইংরেজ কর্মচারী এবং বাঙালি বাবু দের কাছে আনন্দের এক অন্যতম উৎস ছিল ঠিক তেমনি একটি ধারা প্রবাহমান ছিল এই যৌনপল্লীর হাত ধরেই। এরকম হাজার হাজার ঘটনা আজও অজানা। শুধুমাত্র ঠাকুর পরিবারকে ঘিরেই ঘটেছে।