প্রথমে গানের শিক্ষক, তারপর একের পর এক ছবি ফ্লপ! তাও হাল ছাড়েননি মহানায়ক উত্তম কুমার, দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছিলেন মহানায়ক
আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে অবসান হয়েছিল বেঙ্গলি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ঐতিহাসিক অবিস্মরনীয় যুগের। পতন ঘটেছিল সব থেকে উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের। আজ সকলকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। তখন সালটা ১৯৮০ মাত্র ৫৩ বছর বয়সে তার জীবন অবসান ঘটেছিল।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার ক্যালকাটার আহিরীটোলা অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন অরুণ কুমার চ্যাটার্জী। ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জন্ম তার। তখন কে জানত বড় হয়ে তিনি উত্তম কুমার হিসেবে পরিচিত হবেন! তবে মহানায়ক হয়ে ওঠার পথটা কিন্তু অতটা সহজ ছিলো না যতটা সহজ দেখতে লাগে দূর থেকে। অন্যান্য অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মতোই তাকে ওপার হতে হয়েছে একাধিক জীবন যুদ্ধ।
জীবনের শুরুর গল্পটা কিন্তু ছিল একদম উল্টো স্রোতের। বাবা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় এবং মা চপলা দেবীর একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। ছোট থেকেই অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে দিন কেটেছে তার। গিরিশ মুখোপাধ্যায় রোডের একটি মাত্র ঘরে থাকতেন তারা। তবে সামান্য বেতনের সংসার চলছে না দেখে মহানায়ক ঠিক করেন তাকে বাবাকে সাহায্য করতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত মতোই পথে নেমে পড়েছিলেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু করলেন গানের শিক্ষাকতা। বেশ কিছুদিনের মধ্যেই গানের শিক্ষক হিসেবে তাঁর পরিচিতি বেড়ে গিয়েছিল। তবে সবচেয়ে লোভনীয় প্রস্তাব পেয়েছিলেন কিছুদিনের মধ্যেই, গান শেখানোর প্রস্তাব এসেছিল গাঙ্গুলী বাড়ির একমাত্র মেয়ে গৌরী দেবীকে। তখনকার দিনের বেতন ও বেশ ভালো।
এরপর থেকেই কাছে আসা শুরু হল উত্তম ও গৌরির। তারপর ১৯৫০ সালে ১ লা জুন অরুণের ঘরে এলেন গৌরী। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি তার প্রকৃত নাম অরুণ কুমার চ্যাটার্জী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। প্রথমে তিনি মাত্র ৫ শিখিতে দৈনিক ভিত্তিতে একটি ছবিতে অভিনয় করলেন। তখন সালটা ১৯৪৭। হিন্দি চলচ্চিত্রের মায়াডোরে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তবে কোনো কারণবশত মুক্তি পায়নি সেই ছবি।
প্রথম ‘দৃষ্টিনন্দন’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। তবে কর্ম জীবনের শুরুতেই জীবন থাকে নিরাশ করেছে বহুবার। বেশ কয়েকটি ছবি পরপর ফ্লপ হয়েছে। ‘দৃষ্টিকোণ’ এরপর ফ্লপ হয়েছিল তার পরের ছবি ‘কামনা’। তারপরে দুই ছবি ‘মর্যাদা’ এবং ‘ওরে যাত্রী’ ও সেভাবে দর্শকের মন কাড়তে পারল না। এরপরেও দুটি ছবি করেছেন ‘সহযাত্রী’ এবং ‘নষ্টনীড়’। তবে এর ফল কিন্তু একইরকম হয়েছিল। একের পর এক ছবি ফ্লপ হয় তার নাম বদলে দেয় দর্শকেরা। আড়ালে আড়ালে তাকে ডাকা হতো ‘ফ্লপ মাস্টার জেনারেল’ বা এফ এম জি। এই নাম টি এতটাই পপুলার হয়ে উঠলো যে খবরের কাগজেও এই নামেই হেডলাইন বেরিয়েছিল সেই সময়।
একের পর এক ছবি ফ্লপ হওয়ায় প্রথমে পরিচালক মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শে অরুণ কুমার নামটি পাল্টে নাম রাখলেন অরূপ কুমার।তারপরেও সাফল্য ধরা না দিলে পাহাড়ী সান্যাল এর কথায় তিনি নাম রাখলেন উত্তম কুমার। নাম পরিবর্তনের পর ১৯৫১ সালে সঞ্জীবনী সিনেমাটিও ফ্লপ হয়। বসু পরিবার ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি সেখান থেকেই শুরু তার নাম খ্যাতি। পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করলেও বেশ ছড়িয়ে পড়েছিল তার নাম। ১৯৫৩ সালে সাড়ে চুয়াত্তর নামক ছবিতে প্রথম হাজির হন সফল নায়ক হিসেবে।
তবে পঞ্চাশের দশকেই ৫০ টিরও বেশি ছবি বাণিজ্যিকভাবে সফলতা অর্জন করতে পারেনি। পঞ্চাশের পরের দশকে হারানো সুর, সপ্তপদী, চাওয়া পাওয়ার মতো বেশ কয়েকটি ছবি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছিল।
অভিনেতা বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন, তারমধ্যে মোট ৩১ টি ছবি করেছেন অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের সাথে। উত্তম-সুচিত্রা জুটি দর্শক মহলে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিল। তবে পরবর্তীকালে দুজনে একসাথে ছবি করা কমিয়ে দিয়েছিলেন। একসময় সুচিত্রা দেবী চলে যান লোকচক্ষুর আড়ালে। তবে তাদের মধ্যে কি কোন নায়ক-নায়িকা ছাড়াও অন্য সম্পর্ক ছিল! তা আজও রহস্যময় রয়ে গিয়েছে। গৌরী দেবী কে ছেড়ে মৃত্যুর আগে পর্যন্তমহানায়ক সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে কাটিয়েছেন।