অতিমারী পরিস্থিতিতে পরিবারের আর্থিক হাল ফেরাতে কর্মহীন বাবার পাশে ক্লাস সেভেনের ছোট্ট পলাশ! পথে সাইকেলে ঘুরে ঘুরে আইসক্রিম বিক্রি করছে এই মেধাবী ছাত্র
গত বছর থেকে করোনা পরিস্থিতিতে বহু মানুষ তাদের কাজ হারিয়েছেন, হারিয়েছেন রুটি-রোজগারের উপায়। ফলে গত বছর থেকেই অনাহারে ভুগছেন বহু পরিবার। বর্তমানে আবার করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে চলেছে।
তবে প্রথম ঢেউয়ের দীর্ঘকালীন লকডাউন এর জন্য অনেক মানুষ এখনো অব্দি কর্মহীন রয়ে গিয়েছেন। তাদের পরিবারের আর্থিক সমস্যা দেখা দিয়েছে, ছোটদের পড়াশোনায় ভাটা পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের স্কুল শিক্ষার ব্যবস্থা।
অর্থকষ্টে যেখানে দুবেলা-দুমুঠো খাবার জুটছে না সেখানে পড়াশোনা করা অনেক পরিবারের ক্ষেত্রে বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই জন্য পরিবারের হাল ধরতে অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা এই অল্প বয়সে রোজগারের পথে নেমেছে অনেক গরিব ছাত্ররা পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে।
কিছুদিন আগেই একটি একজন ছাত্রের সাইকেল ঘুরে সাইকেলে ঘুরে ঘুরে মিষ্টি বিক্রির ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। লকডাউন এ বাবা কর্মহীন হয়ে পড়ায় বাড়ির একমাত্র ভরসা ছিল সে, তাই পড়াশোনা বন্ধ করে সাইকেলে ঘুরে ঘুরে মিষ্টি বিক্রির কাজেই নেমেছিল। সেই গল্প আমরা অনেকেই জানি।
এবার আরও একবার সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হলো। ঘটনাটি নদীয়া জেলার জেলার নবদ্বীপ এর কেলের ডাঙ্গার। ছাত্রের নাম পলাশ দেবনাথ সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে পলাশ। পলাশের বাবা অজয় দেবনাথ। লকডাউন এর আগে অজয় বাবুর একটি ছোট্ট মিষ্টির দোকান ছিল কিন্তু করোনা আবহাওয়ার পরে লকডাউন এর সময় তার মিষ্টির দোকান বন্ধ হয়ে যায়।
খরিদ্দার না আসায় মিষ্টি বিক্রি হতো না, ফলে দোকানটি আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়। এর পরেই শুরু হতে থাকে সংসারে অনাহার অভাব এবং অনাহার দূর করতেই ছোট্ট পলাশ রাস্তায় নেমে পড়ে আইসক্রিম বিক্রি করতে।
নিজের সাইকেলের পেছনে এক বাক্স পেপসি আইসক্রিম নিয়ে সকালবেলায় বেরিয়ে পড়ে পলাশ সারাদিন ঘুরে ঘুরে পেপসি আইসক্রিম বিক্রি করে সে। দিনের শেষে যতটুক উপার্জন হয় সেইটুকুই বাবার হাতে তুলে দিচ্ছে পলাশ। এদিকে অজয় বাবুও বেকার বসে নেই মিষ্টির দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে টোটো চালক হিসেবে উপার্জন করতে শুরু করেছেন তিনি।
কিন্তু পলাশের মত অনেকেরই এই ছেলেবেলা অন্ধকারেই তলিয়ে গেল। যেই বয়সে পড়াশোনা এবং খেলাধুলো করার সময় সেই সময়টা সংসারের জন্য দিতে হচ্ছে তাদের। সংসারের হাল ফেরাতে তাদের এই পথ বেছে নিতে হয়েছে।
দুই বছর যাবত করোনা পরিস্থিতির ফলে সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ, বন্ধ লেখাপড়া। ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত বাবা মায়েরা কবে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেই অপেক্ষাতেই রয়েছে গোটা দেশবাসী।