পারভীন বাবি ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং মডেল। ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে বাবি হিন্দি ছায়াছবিগুলিতে তাঁর অভিনয়ের জন্য প্রথমদিকে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে, তিনি একটি গ্ল্যামারাস ফ্যাশন আইকন হিসাবে পরিচিত ছিলেন। অসম্ভব সুন্দরী হওয়ায় খুব সহজেই পরিচালকদের নজরে এসেছিলেন তিনি।
পারভীন বাবি ১৯৫৪ সালের ৪ঠা এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন গুজরাত এর জুনাগড় এ। জুনাগর এর ধার্মিক মুসলমান পরিবারের মেয়ে পারভিন। অতি শৈশবে তিনি পিতৃহারা হন। পরিবারের কেউই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত ছিলেন না কিন্তু বাবি খুব সহজেই ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নিয়েছিলেন। পরিবারের একমাত্র সন্তান ছিলেন পারভীন বাবি আহমেদাবাদের সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল ও কলেজে ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর পাশ করেন তিনি।
২০০৫ সালে হঠাৎই একদিন মুম্বাইয়ের অভিজাত সোসাইটির বাইরে বাইরে থেকে প্রতিবেশীরা পচা গন্ধ পেতে শুরু করে, তারপর পুলিশের কাছে খবর দেয় প্রতিবেশীরা। পুলিশ আসার পর বাড়ি ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকা হয়। ভেতরে ঢুকে পাওয়া যায় পারভীন বাবির মৃতদেহ। বলিউড সেদিন হারিয়েছিল ইন্ডাস্ট্রির আরো একজন কিংবদন্তি, বেঁচে থাকতে যার মর্ম কোনদিনও বোঝেন নি কেউ।
বলিউডে তখন স্বর্ণযুগ চলছে ইন্ডাস্ট্রি মাতিয়ে রেখেছিলেন হেমা মালিনী, শর্মিলা ঠাকুরের মত দাপুটে অভিনেত্রীরা। এইসবের মাঝেই এসে হাজির হলেন আরো একজন সুন্দরী রমণী নাম পারভীন বাবি। পারভীন খুব সহজেই সকলের নজর কেড়েছিল । তার রূপে সকলেই মুগ্ধ হয়েছিল সেই সময়, তৎকালীন সেই সময় তিনি পড়েছিলেন রিপড জিনস এবং ঠোঁটে ছিল তার সিগারেট। কোন রকম কোন বলিউড ব্যাকগ্রাউন্ড ছিলনা তার।
এরপরে ১৯৭৩ সালে ‘চরিত্র’ সিনেমার মধ্য দিয়ে ডেবিউ করেন তিনি। বলিউডে এটিই ছিল তার প্রথম কাজ। এরপর ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় ‘ মজবুর’ এবং ১৯৭৫ এ ‘দিওয়ার’ এই দুই সিনেমার মাধ্যমে পারভিন বাবি পাকাপোক্তভাবে জায়গা করে নেন বলিউডে। দুটো সিনেমাই সুপার ডুপার হিট করেছিল ইন্ডাস্ট্রিতে। দিওয়ার সিনেমাটিতে দেহোপজীবিনীর ভূমিকা দারুণভাবে প্লে করেছিল পারভীন। এরপর বিভিন্ন নামিদামি ম্যাগাজিনের পর্ভীন বাবি ছবি ছাপা হতো। তখন দিকে দিকে তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।
পারভীন সারাজীবন অবিবাহিত ছিলেন এবং রোমান্টিকভাবে বহু বলিউডের পুরুষের সাথে যুক্ত ছিলেন। অভিনেতা ড্যানি ডেনজংপা এবং কবির বেদির সাথে তাঁর প্রেমের সম্পর্কটি ছিল চর্চিত। মহেশ ভট্টের সাথে তাঁর সম্পর্কের বিষয়টি অনেকটাই আলোচিত ছিল কারণ মহেশ সেই সময় বিবাহিত ছিলেন এবং একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন, যখন পারভিন ববি তখনকার বলিউডের শীর্ষ অভিনেত্রীদের একজন ছিলেন। মহেশ এবং পারভীন ১৯৭৭ সালে ডেটিং শুরু করেছিলেন। এক সময় মহেশ ভাটের সঙ্গে ঘর করতে চেয়েছিলেন পারভীন। কিন্তু হঠাৎই তার জীবনে আসে বিরাট পরিবর্তন।
তিনি প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, এটি একটি মানসিক অসুস্থতা যদিও তিনি নিয়মিত এটিকে অস্বীকার করেছেন। ১৯৮৩ সালে হঠাৎই পর্ভীন বাবি নিরুদ্দেশ হয়ে যান ১০ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ৫০ টিরও বেশি সুপারহিট চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু হঠাৎই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়ে যান তিনি। পরে জানা যায় অসুস্থতার জেরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে দূরে রেখেছিলেন নিজেকে এবং বন্ধুদের সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়া যাত্রা করেছিলেন তিনি। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে তিনি সকলের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, কাউকে নিজের বাড়িতে ঢুকতে দিতেন না, সমস্ত কিছু ভুলে যেতেন শেষের কয়েক দিন তিনি মনে রাখার জন্য ফোন কল গুলি রেকর্ড করে রেখেছিলেন। অসুস্থতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর পর তাকে সুস্থ করার জন্য মহেশ ভাট চেষ্টা করেছিল কিন্তু বাবি তাকে নিজের বাড়িতে ঢুকতে দেননি। সকলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রেখে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
পারভিনের মানসিক অসুস্থতার কারণে তিনি তাঁর নিজের রক্তের সম্পর্ক সহ বেশিরভাগ প্রিয়জনের সাথে তার সম্পর্কের অবসান ঘটিয়েছিলেন, পরিচিত ব্যক্তির সাথে খুব কম যোগাযোগ করেছিলেন এবং সবার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়ায় তিনি পুনরাবৃত্তি হয়ে উঠেছিলেন। মৃত্যুর আগে আগে তিনি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তবে মৃত্যুর পর তাঁর শেষকৃত্য তার পরিবারের লোকেরা মুসলিম ধর্ম মতে শেষ করেন। মৃত্যুর পরে দাবি করা হয় তিনি নাকি মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সুশান্ত সিং এর মৃত্যুর পরেও সমস্ত বলিউড এই একই দাবি করেছিলেন, শেষ কয়েক দিনে নাকি সুশান্ত সিং মৃত্যু ভয় পেতেন। তিনিও মানসিকভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন এমনটাই দাবি করেছিল পুরো বলিউড। বলিউড এর এই দুই সুপারস্টার এর মৃত্যুর ঘটনাগুলির মধ্যে কোথাও যেন মিল রয়েছে, যোগসুত্র থেকে গেছে কোথাও। অল্প সময়ের মধ্যেই বলিউডে নিজেদের পাকাপাকি জায়গা করে নেওয়ার এই দুই অভিনেতার মৃত্যুর রহস্য কি তবে বলিউডের কোথাও লুকিয়ে রয়েছে? এখনো অব্দি দুজনের একজনেরও মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করা যায়নি। সুশান্ত সিং এর মৃত্যুর পরে সারা নেট দুনিয়ায় বিক্ষোভের ঝড় উঠেছিল বর্তমানে সেই ঝড় কিছুটা শান্ত হলেও এখনো রহস্য থেকেই যাচ্ছে তার মৃত্যুতে।