কী? অক্ষয় হলে এখনি করে দিত? বাঙালি বলে বদনাম! কি পারে না বাঙালি? রাগ করে ঝাঁপই দিয়ে দিলেন টোটা! তারপর যা ঘটলো…
ফেলুদাকে নতুনভাবে সামনে এনেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়(Srijit Mukherjee)। আড্ডা টাইমসের ফেলুদা সিরিজে টোটা রায়চৌধুরীকে(Tota Roychowdhury) দেখা গিয়েছিল ফেলুদার ভূমিকায়। এর আগে দার্জিলিং জমজমাটে ফেলুদা হিসেবে দেখা গিয়েছিল তাকে। তবে ফিটনেস নিয়ে বরাবর সচেতন তিনি। দার্জিলিং জমজমাটে যতগুলি স্টান্ট নিজেই করেছিলেন। কোনরকম বডি ডবল নেননি।
তবে এই অভ্যাসে তার বহুদিনের। সম্প্রতি ফেসবুকের পাতা(Facebook Post)য় নিজের পুরনো কিছু ঘটনার কথা তুলে ধরলেন তিনি। অ্যালবাম ঘেঁটে অঞ্জন চৌধুরী পরিচালিত ‘নাচ নাগিনী নাচ রে’ ছবির একটি দৃশ্য শেয়ার করেছেন। সেখানেও নাচের দৃশ্যে একটি বিশেষ স্টান্ট করতে হয়েছিল তাকে।
সেই সময় মুম্বাই থেকে আসা করিওগ্রাফার ওম প্রকাশকে চমকে দিয়েছিলেন টোটা রায়চৌধুরী। সেই ঘটনায় শেয়ার করলেন অভিনেতা। যেটা আবার শেয়ার করেছেন সৃজিত নিজেও। অভিনেতা লিখেছেন,’রবিবার সকাল। স্তূপীকৃত পুরনো ফাইলগুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে দৈবাৎ এই ছবিটা হাতে এলো এবং স্মৃতিমেদুরতা উস্কে দিল। এটি ‘নাচ নাগিনী নাচ রে’ চলচ্চিত্রের স্থিরচিত্র। সেই সময়ে ছবিটি বক্স অফিসে বেশ বড় মাপের সাফল্য লাভ করেছিল। পরিচালনায় ছিলেন প্রবাদপ্রতিম চিত্রনাট্যকার এবং সুপারহিট ডিরেক্টর, শ্রী অঞ্জন চৌধুরী। গানের শুটিং চলছিল জোকা ছাড়িয়ে একটি রিসর্টে। নৃত্য নির্দেশনায় ছিলেন মুম্বাইয়ের কোরিওগ্রাফার, ওমপ্রকাশ। মজাদার, হাসিখুশি মানুষ এই ওম’জি। ভালই চলছিল কিন্তু হঠাৎ করে তাঁর মনে হলো যে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা নায়িকার, অর্থাৎ চুমকি চৌধুরীর, মাথার ওপর দিয়ে যদি গোলকিপারের মত ডাইভ্ মেরে শরীরটা শূন্যে ভাসিয়ে দিয়ে হাতের ওপর পড়েই ডিগবাজি খেয়ে উঠে দাঁড়াই তাহলে নাচটার জমে দই হওয়ার একটি প্রভূত সম্ভাবনা রইবে। এদিকে অঞ্জনদা সেদিন অনুপস্থিত। তাঁর তিন সুযোগ্য সহকারী হরোদা, সুভাষদা ও শ্যামাদা এই প্রস্তাবে নিমরাজি। হরোদা ফিসফিস করে বলে গেলেন, ‘ডাইভ্ মারিস না। আশেপাশে হাসপাতাল নেই!’ আমি তখন দোটানায়। একদিকে, নির্দেশকের নির্দেশ পালন করাই আমার ধর্ম। অন্যদিকে, টানা শুটিং চলবে, সত্যিই যদি চোটজনিত কারণে শিডিউল ভেস্তে যায় তাহলে প্রযোজককে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে এবং সেটার জন্য মূলত আমাকেই দায়ী করা হবে। এক্ষেত্রে যেহেতু পরিচালকই প্রযোজক সেহেতু সহকারীরাও বেঁকে বসেছেন। হতাশ হয়ে ওম’জি বললেন, ‘থাক, এসব এখানে কেউ করতে পারবে না। এটা অক্ষয় কুমার হলে এক কথায় করে দিত।’ ব্যাস, যজ্ঞাগ্নিতে পোয়াটাক ঘি। আমিও দপ্ । তার মানে বাঙালিরা পারে না? রোখ চেপে গেল। শট আমি দেবই। এবং সবার মানা সত্ত্বেও দিলাম। ওম’জি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘ কেয়া বাত রাজা, সুপার্ব।’ গলায় আরোপিত তাচ্ছিল্য এনে বললাম, ‘পারফেক্ট নহি হুয়া ওম’জি, ফির সে করতে হ্যায়।’ হাঁ করে চেয়ে রইলেন আমার দিকে। আমিও পরপর শট্ দিয়ে গেলাম যতক্ষণ না উনি সর্বসমক্ষে স্বীকার করতে বাধ্য হলেন যে বম্বের মানদণ্ডেও স্টান্ট’টি নিখুঁত হয়েছে। তারপর বিনীত ভাবে ওনাকে গিয়ে বললাম যে আমাকে দেখে অনেকেই একটু আন্ডার-এস্টিমেট্ করে থাকেন কিন্তু বিশ্বাস করুন স্যার, আমিও পারি’।
ওম প্রকাশ জির সঙ্গে দেখা হয়েছিল টোটার। সেই ঘটনা নিয়ে বলেন,’ঘটনার বেশ কয়েকবছর পর কোরিওগ্রাফার ওমপ্রকাশজি-র সঙ্গে বিমানবন্দরে দেখা হলে ঠিক কী ঘটেছিল, সেকথা জানিয়ে টোটা লিখেছেন, ‘এর বেশ কয়েক বছর পর মুম্বই এয়ারপোর্টে ওনার সাথে আবার দেখা। দুজন সহকারীকে নিয়ে হায়দ্রাবাদ যাচ্ছিলেন।।আমি কলকাতায় ফিরছিলাম। গিয়ে অভিবাদন জানাতেই বুকে টেনে নিলেন। সহকারীদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘ ইয়ে দেখ, বঙ্গাল কা অকশয় কুমার।’ আমি অসম্ভব বিব্রত হয়ে প্রবলভাবে মাথা নাড়িয়ে, কোথায় মহাঋষি-কোথায় ছোটোপিসি, মার্কা অভিব্যক্তি দিয়ে বিষয়টির পাশ কাটানোর চেষ্টা করায় উনি সবিস্তারে ঘটনাটি (কিঞ্চিৎ অতিরঞ্জিত করে ) ওনাদের শোনালেন।
না সত্যিই; অক্ষয় কুমার তো বহুদূর, টলি কুমারও হতে পারি নি। পরিকল্পনায় এবং পি.আর-এ অবশ্যই খামতি ছিল কিন্ত পরিশ্রমে ও প্রয়াসে, সততা – অতীতেও ছিল, অধুনাও আছে এবং আজীবনই থাকবে’।
পাশাপাশি অভিনেতা জানিয়েছেন নবাগতরা যখন তার থেকে টিপস চান তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন,’মাঝেমধ্যে নবাগতরা আমার পুরোনো সিনেমাগুলো দেখে, কি ভাবে অ্যাকশন দৃশ্যগুলো করতাম সে ব্যাপারে জানতে চায়, টিপস্ চায়। কি বলব বুঝে উঠতে পারিনা। আমি তো অবিমৃষ্যকারী,অর্ধোন্মাদ ও নির্বোধ এর কিম্ভূত জগাখিচুড়ি ছিলাম! এখনও যে খুব একটা শুধরেছি সেটাও প্রত্যয়ের সঙ্গে দাবী করতে পারি না। অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে হঠকারীর মত, ক্যামেরায় এবং কর্মজীবনে, শুধুমাত্র আবেগের দ্বারায় বশীভূত হয়ে এমন অনেক কিছুই করেছি যেগুলোর জন্য প্রচুর খেসারত দিতে হয়েছে; এখনও দিতে হচ্ছে। তাছাড়া ইদানীং এখানে তো প্রায় সবাই larger than life ছেড়ে slice of life এর পশ্চাতেই ধাবমান। ফলতঃ পাঠান, পুষ্পা তো গ্রহান্তরের; পাগলু-২ নির্মাণেরও সামর্থ্য বা সক্ষমতা, আমাদের ক্রমে ক্রমে হ্রাস পেয়েছে। এমতাবস্থায়, সুস্থ শরীরকে ব্যস্ত করার উপদেশ আমি দিই কোন মুখে? বিশেষ করে যেখানে স্টান্ট দৃশ্যায়নের সময়ে আমাদের সুরক্ষার ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাপনায় অতিজাগতিক ঔদাসীন্য প্রত্যক্ষ করলে হলিউড বা বলিউড, চেলা উড (ইয়ে, চেলা কাঠ) নিয়ে মারতে আসবে’।
তবে কথা প্রসঙ্গে টোটা রায়চৌধুরী সৃজিত মুখার্জিকে উদ্দেশ্য করে লেখেন,’তবে ক্বচিৎ কদাচিৎ সমগোত্রীয় সহ-উন্মাদের পাল্লায় পড়তে হয় যিনি, স্টান্টম্যান তৈরি থাকা সত্বেও, আমাকেই আদেশ করবেন যে খাদে লাফ মারতে হবে। আর শুধু লাফ মারলেই চলবে না, মাথাটা খাদের দিকে করে পড়তে হবে এবং পড়েই ক্যামেরার দিকে মুখ ঘুরিয়ে, ঝোপের উপর দিয়ে উল্টো ডিগবাজি খেয়ে, ঠিক গড়িয়ে পড়ার প্রাক্ মুহূর্তে খপ্ করে ডালপালাগুলো খামচে ধরে ঝুলে থাকতে হবে এবং সেটা গোটা সাত-আষ্টেকবার বার করতে হবে যাতে পর্বত,বন ও অন্তরীক্ষ থেকে নানান অ্যাঙ্গেলে শটগুলো নেওয়া যায়। এইধরনের ঝুঁকিপূর্ন পরিস্থিতিগুলোতে পুরনো বিদ্যেটা বড়ই কাজে আসে। তবে শটগুলো মনোমত হবার পর পরিচালক যখন শিশুর মত হাততালি দিয়ে ওঠেন তখন চোট, আঘাত বা রক্তপাত সব সার্থক বলেই মনে হয় এবং সেই মুহূর্তে খুবই জীবন্ত অনুভব করি’।
হাজার হোক তার ফেলুদা তাকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন তিনি কি পোস্ট এড়িয়ে যেতে পারেন? সৃজিতও তার পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন,’ আমার ফেলুদা আমায় বরাবরই গর্বিত করে’।