দুই বাটি কাঁচা লঙ্কাবাটা দেওয়া হয়েছিল গোপনাঙ্গে! তৎকালীন সমাজে বিধবা অবস্থায় সধবা সাজার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন যিনি…..
অজস্র বিপ্লবীদের নাম জ্বলজ্বল করে ইতিহাসের পাতায় পাতায়। ক্ষুদিরাম বসু, সূর্যসেন, বিনয়-বাদল-দীনেশ আরো কয়েক দল নক্ষত্রের নাম। পাশাপাশি মহিলাদের নামও দেখা যায়, যেমন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাতঙ্গিনী হাজরা যাদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম।
কিন্তু দুঃখের বিষয় যে মানুষটির নাম ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যেতে বসেছে তিনি একজন বীর নারী যোদ্ধা, নাম ননীবালা দেবী— বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দী।
জন্ম: ১৮৮৮ সালের হাওড়া জেলার বালিতে। বাবার নাম সূর্যকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, মা গিরিবালা দেবী। সেই সময়ের সামাজিক রীতি মেনে ১৮৯৯ সালে মাত্র এগারো বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।
কিছু বছর কাটতে না কাটতেই মাত্র ৫ বছরের মাথায় ১৯০৪ সালে তাঁর স্বামী মারা যান। তাঁর বয়স তখন মাত্র ষোলো। এরপর তিনি তাঁর বাবার কাছেই ফিরে আসেন। তবে তিনি পড়াশোনা করতে চেয়ে ছিলেন। তবে তৎকালীন রক্ষণশীল পরিবার হওয়ায় পড়াশোনার মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান তাঁর বাবা।
১৯১৪ সালে বেঁধেছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। সেই সময় ভারতে যুগান্তর দলের বিপ্লবীরা জার্মানির কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভারতব্যাপী একটা বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে স্বাধীনতা আনবার রাস্তা পরিষ্কার করতে চেষ্টা করছিলেন। ১৯১৫ সালে জেলে বন্দী হয়েছিলেন রাম চন্দ্র মজুমদার রয়েছে সমস্ত গোপন তথ্য।
কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে! অর্থাৎ জেল থেকে খবর নিয়ে আসবে কে! এই সময়ে সামনে এগিয়ে এলেন সাহসী ননীবালা দেবী। বন্দী রামচন্দ্রের স্ত্রী সেজে ঢুকে পড়লেন আলিপুর জেলে। সমস্ত গোপন খবরা-খবর গোপনে নিয়ে এলেন তিনি তবে টের পায়নি কাকপক্ষীও।
চন্দননগরে থাকাকালীন পুলিশের তাড়া খেয়ে বিপ্লবীর আশ্রয় নিয়েছিলেন তার গৃহে পুলিশ দরজা ধাক্কা দিতে দেখতে পান এক অবলা নারীকে। তবে মুখ দেখে পুলিশ বুঝতে পারেননি তার মধ্যে রয়েছে বিপ্লবের আগুন। সেই যাত্রায় তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে হঠাৎই তিনি কলেরায় আক্রান্ত হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে, শারীরিকভাবে দুর্বল ননীবালা দেবীর স্থান হয় বেনারস জেলে।
শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার। গোপনাঙ্গে লঙ্কার গুঁড়ো পর্যন্ত দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই জ্বালায় ছটফট করেছিলেন তিনি কিন্তু তবুও মুখ ফুটে টু শব্দটি কাটেননি। তার একগুঁয়ে মনোভাবের কাছে হার মেনে ছিল ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। তাকে পরবর্তীকালে পাঠানো হয় প্রেসিডেন্সি জেলে।
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে যখন সব রাজবন্দীদের ছেড়ে দেয়া হয় তখন ছাড়া পেয়েছিলেন ননীবালা দেবী ও। শেষ জীবন বাপের বাড়ির আশ্রয়েই কাটাতে চেয়েছিলেন। তবে বাপের বাড়িতে ঠাঁই দেয়নি কেউ। রোগব্যাধিতে জর্জরিত, একাকী বৃদ্ধা একেবারে নিঃসঙ্গ জীবন কাটানোর জন্য প্রস্তুত হন। এভাবেই তিনি জীবন কাটাতে থাকেন।যখন সরকারি পেনশন এসে পৌঁছাল তখন শেষ হয়ে গেছে সব।
তবে মানুষের জন্য ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করলেও এমনকি নিজের জীবন দিয়ে দিলেও ইতিহাস তাকে প্রায় ভুলেই গেছে। তবে ননীবালা দেবীর মতো নারী না থাকলে হয়তো ভারতবর্ষে স্বাধীনতার সূর্য এত তাড়াতাড়ি উদয় হতো না।
দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় কুড়ি বছর পরে ১৯৬৭ সালের মে মাসে তিনি মারা যান। ইতিহাস তাঁর জন্মদিন বা মৃত্যুদিনের তারিখ মনে রাখার প্রয়োজন টুকু ও বোধ করেনি। স্বদেশীদের নিয়ে তৈরি একটি বাংলা চলচ্চিত্রে (‘বিয়াল্লিশ’) তাঁকে নিয়ে কিছু দৃশ্য ছিলো, এইটুকুই।
সামান্য একটা গোটা কাঁচালঙ্কা শুধু খেতে বললেই মানুষ বেশ কয়েক পা পিছিয়ে যান। এইরকম দু’বাটি লঙ্কাবাটা তাঁর শরীরের গোপন জায়গার ভেতরে দিয়ে দেওয়া হয়েছিলো! কি অপরিসীম যন্ত্রণা তিনি সহ্য করেছিলেন, সুস্থ অবস্থায় কেউই তা অনুভব করতে পারবে না!