বাঘের সাথে কুস্তি লড়াই থেকে গায়ে হেলান দিয়ে ছবি তুলতেন! কবর ফুঁড়ে উঠে এসেছিলেন বাংলার মেয়ে সুশীলা সুন্দরী
আচ্ছা কখনো বাঘের ঘাড়ের ঠেস দিয়ে ছবি তোলার কথা ভেবেছেন! কিংবা এরকম স্বপ্ন দেখেছেন কখনো! এসব ভাবা তো দূরের কথা স্বপ্নতে ও হয়তো আসে না সাধারন মানুষের। তবে উনিশ শতকের শেষভাগে এমনই কান্ড বাস্তবে করে দেখিয়েছিলেন এক নারী। তিনি সুশীলা সুন্দরী। বাঘের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল তার। বাঘের সঙ্গে সার্কাস খেলা দেখানো ভারতের প্রথম মহিলা যিনি।
তবে ইদানিং সার্কাস বলে কোন বিষয় বস্তুর অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। তবে একসময় আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে শীতে কলকাতার ময়দানে জমে উঠতো সার্কাসের আসন। নবগোপাল মিত্রের হাত ধরেই এসেছিল এই সার্কাস। তার জামাই রাজেন্দ্রলাল সিংহ ১৮৮৩ সালে কিছু বিদেশি খেলোয়াড়দের সাহায্যে শুরু করেছিলেন গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস। তবে সেই সময়ে সার্কাস এই হিংস্র পশুর সেভাবে শুরু হয়নি।
আধুনিক সার্কাস বলতে যা বোঝায় তার সূচনা হয়েছিল মতিলাল বসুর ‘বোসের গ্রেট বেঙ্গল’ সার্কাস এর মাধ্যমে। তার স্ত্রীর হাত ধরেই প্রথম বাঙালি নারীর পদার্পণ। তিনি ছিলেন ট্রাপিজের খেলায় সিদ্ধহস্ত। ১৮৯৬ সালে রেয়াদের মহারাজা তাদের কৌশলে খুশি হয়ে একজোড়া বাঘ উপহার দিয়েছিলেন। তাদের নাম ছিল লক্ষী ও নারায়ন। তারপর এই বাংলায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বাঘের খেলা। এরপরই মূল আকর্ষণ হয়ে ওঠেন এই ব্যাঘ্রকন্যা সুশীলা সুন্দরী।
সুশীলার জন্ম কলকাতার রামবাগান অঞ্চলে,১৮৭৯ সালে। সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘোড়া চালনা, জিমনাস্টিক সবই শিখেছিলেন তিনি। লক্ষী নারায়নের হাত ধরেই তারও বাঘের খেলা দেখানোর পাঠ শুরু হয়। এর আগে যেখানে তিনি বাঘের সাথে খেলা দেখাতেন সেখানে সবসময়ই বাঘ কে চেইন দিয়ে বাধা রাখা হতো। তবে লক্ষী ও নারায়ন থাকতো মুক্ত। বাঘের খাঁচায় ঢুকে তিনি কখনো বাঘকে দাঁড় করাতেন আবার কখনও বসিয়ে দিতেন। এর সাথে চলতে বাঘের সাথে কুস্তি। যা দেখে দর্শকরা হা করে তাকিয়ে থাকতো। খেলা দেখানোর পরে তিনি বাঘের গায়ে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ বসতেন।
এছাড়াও রয়েছে তার জীবনে আরেকটি ঘটনা। তিনি যে কতটা ভয়াবহ বাহুবল আয়ত্ত করেছিলেন তা সেই ঘটনা থেকেই প্রমাণিত। এক সার্কাসে শো চলাকালীন হঠাৎই প্রচন্ড ঝড় এবং মুষলধারে বৃষ্টি নামে। সেই সময় সার্কাস দেখানোর জন্য কবর দেয়া হয়েছিল সুশীলা সুন্দরী কে। তবে বাড়ি ফিরে প্রফেসর বোসের মনে পড়েছিল সেই কবরের কথা। তিনি দ্রুত মাঠে ফিরে গিয়ে দেখেন সুশীলা নিজের গায়ের জোরে কবর ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছেন।
১৯২৪ সালে পৃথিবীর বুক ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এই ব্যাঘ্রকন্যা। বাঘ ছাড়াও হিংস্র এবং বুনো বাঘদের নিয়ে খেলা দেখিয়েছেন তিনি। বেশ কয়েকবার বাঘের থাবায় আক্রান্ত হলেও হাল ছাড়েননি সুশীলা।