শ্রীলেখার “খামতি দিদিমণি” – কটাক্ষের উত্তরে “চকলেট নিয়েছি ইলেকশন টিকিট নয়, চকলেট খেয়েছি মোটা টাকার ঘুষ নয়। আমরা একটা সভ্য দেশে বাস করি, বর্বর নই” – কড়া জবাব স্বস্তিকার
অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, বাংলা অভিনয় জগতের অন্যতম একজন জনপ্রিয় ও সমালোচিত অভিনেত্রী। অভিনেত্রী কিছু বললে অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার পরোয়া না করে কিছু পোস্ট করলে সবেতেই নেটিজেনরা মুখিয়ে থাকেন চর্চা করার জন্য। এবার আবারো একবার চলতি বছরের গত শনিবারের রেড রোড কার্নিভাল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ছবিতে সোশ্যাল মিডিয়ার বড় অংশের তোপের মুখে পড়েন অভিনেত্রী। সেই কার্নিভালে অংশগ্রহণ করেছিল প্রচুর ক্লাব। তারই মধ্যে একটি জনপ্রিয় ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বস্তিকা। মঞ্চে উঠে নিজেদের সংস্কৃতির খাতিরে মুখ্যমন্ত্রীর পাঁচ হয়ে প্রণাম করেন অভিনেত্রী। মুখ্যমন্ত্রীও অভিনেত্রীকে মিষ্টি স্বরূপ দিলেন চকলেট। আর তাতেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।
তবে বলে রাখা ভালো বর্তমানে রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক মতপার্থক্য রয়েছে। এছাড়াও অভিনেত্রী যে কোন রাজনৈতিক দলের সাথেই বেশ ভালোমতো দূরত্ব বজায় রেখেই সম্পর্ক রাখেন। রাজনৈতিক মতামতের কট্টর সমালোচনা না করলেও নিজের মতের বিরুদ্ধে কিছু দেখলে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরতে ছাড়েন না অভিনেত্রী। সেই অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় কে মুখ্যমন্ত্রীর পাঁচ হয়ে প্রণাম করতে দেখে রীতিমতো অবাক হয়েছেন দর্শক। অভিনেত্রী স্বস্তিকা কে “খামতি দিদিমণি” বলে কটাক্ষ করেন বাম সমর্থক অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। নেটিজেনদের কেউ তাঁকে “চটিচাটা”, আবার কেউ “মেরুদণ্ডহীন” বলেও কটাক্ষ করেছেন। গত রবিবার অভিনেত্রী এর যোগ্য জবাব দিলেন।
স্বস্তিকা পরে অভিনেত্রী বলেন, “আমি একটা ক্লাবের সাথে কার্নিভালে গেছিলাম, এই প্রথমবার। ৯৫ টার ও বেশি ক্লাব যেখানে যোগদান করেছে, সেই সমস্ত প্যান্ডেলে হাজার হাজার মানুষ ঠাকুর দেখতে গেছেন, সেই সমস্ত ক্লাব আমাদের রাজ্যের। কালকেও উপচে পরা ভীড় ছিল। রাজ্যের কি খারাপ অবস্থা সেটা ভেবে কেউ বাড়িতে বসে পুজো বয়কট করেনি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ায় তাঁকে নমস্কার করে বিজয়া জানানোটা ভদ্রতা, সৌজন্য। আমায় দুটো চকলেট দেওয়াটা ওনার ইচ্ছে, সেটা খেয়ে নেওয়াটা আমার”।
এরপরে অভিনেত্রী বেশ কড়া সুরেই বলেন, “চকলেট নিয়েছি ইলেকশন টিকিট নয়, চকলেট খেয়েছি মোটা টাকার ঘুষ নয়। আমরা একটা সভ্য দেশে বাস করি, বর্বর নই। কাল দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলেও একই ভাবে নমস্কার করব কারণ সেটাই ঠিক। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিত্বকে আমি শ্রদ্ধা করি। তার মানে রাজনৈতিক মতবিরোধিতার সঙ্গে আপোষ করা নয়। যেটা অন্যায় তা নিয়ে নিশ্চই বলব কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত বিষয় নিয়ে আমায় জিহাদ ঘোষনা করতেই হবে নাহলেই আমার মেরুদন্ড ধ্বসে পরবে এমন কোনো দাসখত আমি লিখিনি। আর আমার ধ্যান ধারণা বিবেক বিচার আপনাদের কথায় ওঠা নামা করে না। অসভ্য হওয়ার জন্য যে শিরদাঁড়াহীনতা লাগে সেটাও আমার নেই। তাই বেশ করেছি”।
গত শনিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে একগুচ্ছ ছবি পোস্ট করে অভিনেত্রী স্বস্তিকা লিখেছিলেন – “অনেক বছর পর মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হল গতকাল কার্নিভালে। কী দারুণ একটা ইভেন্টের আয়োজন করেছিলেন তিনি। খুব ভালো কাজ করেছে কলকাতা পুলিশও। আমি সবসময়ই প্রশংসা করে এসেছি দিদির লড়াকু ক্ষমতা আর মনোবলের। ওঁকে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে চকোলেট উপহার পেলাম (হার্ট ইন আই ইমোজি)। ধন্যবাদ রাজ ছবিগুলি তুলে দেওয়ার জন্য, এগুলো ভীষণ মিষ্টি। দক্ষিণপাড়ার পুজো উৎসব কমিটির সঙ্গে ওখানে থাকাটা খুব মজাদার হল। আসছে বছর আবার হবে”। অভিনেত্রীর এই পোস্ট ঘিরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। তবে এবার এটাই দেখার যে অভিনেত্রী স্বস্তিকার দেওয়া কড়া উত্তরে এই রাজনৈতিক বিতর্ক থামে কিনা।